বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চার চ্যালেঞ্জ, তিন ঝুঁকি দেখছে বিশ্বব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৪ পিএম, ৪ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:৪৫ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে চার ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের ঝুঁকি। বৈশ্বিক এই প্রতিষ্ঠান সে কারণে পূর্বাভাস দিয়েছে যে চলতি বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। সংস্থাটির মতে, এ বছর প্রবৃদ্ধি কমে হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সরকার চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে চ্যালেঞ্জ চারটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অর্থনীতিতে তিনটি ঝুঁকি বিরাজমান বলেও মনে করে সংস্থাটি। প্রথম ঝুঁকি হলো, মুদ্রা বিনিময় হার সংস্কার বিলম্ব হওয়ায় তা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণকে দীর্ঘস্থায়ী করছে। দ্বিতীয়ত, জিনিসপত্রের বাড়তি দামের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকা। আর তৃতীয় ঝুঁকি হলো সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচি না নেওয়ায় তা আর্থিক খাতের চলমান ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
সম্প্রতি দুটি ব্যাংক একীভূত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা নিয়েও মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার।
বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট বা বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রনজিত ঘোষ ও বার্নার্ড হ্যাভেন।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আছে। তবে কোনো সন্দেহ নেই—এ দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। কিন্তু মজুরি অনেকটা এক জায়গায় আটকে আছে। এতে অনেক নিম্ন আয়ের পরিবার চাপের মুখে আছে। এ ছাড়া আর্থিক খাতেও নানা ধরনের ঝুঁকি আছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারি থেকে প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারি–পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে।
"বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা আছে। তবে কোনো সন্দেহ নেই—এ দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। কিন্তু মজুরি অনেকটা এক জায়গায় আটকে আছে। এতে অনেক নিম্ন আয়ের পরিবার চাপের মুখে আছে। এ ছাড়া আর্থিক খাতেও নানা ধরনের ঝুঁকি আছে"। -আবদুল্লায়ে সেক, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর
প্রবৃদ্ধি কমতে পারে
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাস চলতি অর্থবছরের বাজেটে উল্লেখ করা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ কম। চলতি অর্থবছরে সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়।
বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তার আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২১-২২ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ। সংস্থাটির হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরের পর টানা দুই অর্থবছর ধরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬ শতাংশের নিচে নেমে যাচ্ছে।
তবে নানা ধরনের সংস্কার প্রবৃদ্ধির আগের ধারা ফিরিয়ে আনতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে। এ জন্য যেসব সংস্কার করতে হবে, তা–ও বলেছে সংস্থাটি। যেমন মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা; মুদ্রা ও আর্থিক নীতি কঠোর করা; ব্যাংক খাত সংস্কারে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া।