এবার ঢাকার বাজারেও পেঁয়াজের বড় দরপতন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৩ এএম, ২১ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:০৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
উৎপাদন এলাকায় হঠাৎ দরপতনের পর রাজধানী ঢাকার বাজারেও কমেছে পেঁয়াজের দাম। নতুন হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে থাকায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা কমেছে। অথচ রোজা শুরুর আগেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছিল। বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার তখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালি পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হওয়ায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দাম কমে পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে। খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মতো। দরদাম করে নিলে আরও কিছুটা কমে মিলছে পেঁয়াজ। আর কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজার থেকে পাঁচ কেজি হিসেবে কিনলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৫৫ টাকার মতো।
এক সপ্তাহ আগে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে শুনে কৃষকেরা দ্রুত হালি পেঁয়াজ উঠিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এর ফলেই বাজারে সরবরাহ বেড়েছে এবং পেঁয়াজের দামও কমে এসেছে।
দেশে যত পেঁয়াজের উৎপাদন হয়, তার বেশির ভাগই হালি পেঁয়াজ। সাধারণত মার্চের শেষের দিকে এই জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করে। এর আগে দেশে উৎপাদিত আরেক ধরনের পেঁয়াজ বাজারে আসে, যা পরিচিত মুড়িকাটা পেঁয়াজ নামে। এটি অল্প সময় বাজারে থাকে এবং এর উৎপাদনও হয় অল্প পরিমাণে।
রোজায় সাধারণত পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ে। এবারের রোজার ঠিক আগে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তির দিকে ছিল। তবে সময়মতো বাজারে হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে থাকায় এখন দাম দ্রুত কমে যাবে বলে মনে করছেন পেঁয়াজের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক নারায়ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘হালি পেঁয়াজ সময়মতো বাজারে এসেছে। তাতে বাজারে দামের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে। তবে কৃষকদের সুরক্ষা দিতে এখন পেঁয়াজ আমদানির আর প্রয়োজন নেই।’
নারায়ণ সাহা আরও বলেন, এখন পেঁয়াজ সংরক্ষণে জোর দিতে হবে। বাজারে আসা হালি পেঁয়াজ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা গেলে বছরের বাকি সময়েও তা বাজার স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজকের বাজারদর প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকার বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা। গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৪১ শতাংশের মতো। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এই সময়ে অবশ্য বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনকার তুলনায় আরও কিছুটা কম ছিল। ঢাকার বাজারে গত বছর এই সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনের এলাকা হিসেবে খ্যাত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা। চলতি সপ্তাহে এই দুই উপজেলায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দামে ব্যাপক পতন দেখা গেছে। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে সেখানে পেঁয়াজের দাম রীতিমতো অর্ধেক হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। যে পেঁয়াজ প্রতি মণ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, গত রোববার তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
স্থানীয় কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পবিত্র রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে এসেছে। আবার কৃষকেরাও নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের দামে এই পতন ঘটেছে।
সুজানগর হাটের পাইকার আবদুল আজিজ বিশ্বাস বলেন, রমজানের শুরুতে বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম ছিল। তাতে বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। রমজান শুরুর পর থেকেই মজুত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। অন্যদিকে কৃষকেরাও বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে তুলেছেন। তাতে দরপতন ঘটেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারত ছয়টি দেশে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। ওই ছয় দেশের একটি বাংলাদেশ। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছিল, এসব দেশে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। এর আগে মূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ও ১ লাখ টন চিনি আমদানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল।