৭ মাসে এলসি খোলা কমেছে ২৫ শতাংশ কড়াকড়ি ও ডলার সংকট
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৪১ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৩৯ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ডলার সংকট কাটাতে দেশের আমদানিতে লাগাম টানায় উদ্যোগী হয় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। এর প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নতুন এলসি খোলা ২৫ শতাংশ কমেছে। ফলে ভোগ্যপণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য ও পেট্রোলিয়ামসহ বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলা কমেছে।
ব্যাংকাররা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্য অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। বিদেশি বায়ারদের দেশ থেকে পোশাক আমদানির চাহিদা কমে গেছে। একই সঙ্গে দেশের ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট থাকায় ব্যবসায়ীরা চাহিদা থাকলেও আমদানি করতে পারছে না। ফলে সব ধরনের আমদানির পরিমাণ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) নতুন এলসি খোলা হয় ৩ হাজার ৯৪৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ৫ হাজার ২৪৭ কোটি ডলার। ফলে সাত মাসে নতুন এলসি খোলা ২৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমেছে। অপরদিকে এলসি খোলা কমলেও আগের তুলনায় নিষ্পত্তি বেড়েছে। সাত মাসে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। রফতানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয় ‘ব্যাক টু ব্যাক’ এলসির মাধ্যমে। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময় ব্যাক টু ব্যাক এলসি কমেছে ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ সময় ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র নিষ্পত্তি ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে।
ডলার সংকটে আগের তুলনায় এলসি খোলার হার কমানোর ফলে কোনো কোনো পণ্যের আমদানির এলসিও অনেক কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময় ভোগ্যপণ্যের নতুন এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কমেছে যাথাক্রমে ১৮ দশমিক ২২ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে চাল, গম, চিনি, লবণ, ডাল, পেঁয়াজ, মসলা ও সব ধরনের ফলের আমদানির প্রতিটা পণ্যের নতুন এলসি খোলা কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি তুলনায় চলতি অর্থবছরের ওই সময় শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ, নিষ্পত্তি কমেছে ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে সিমেন্টের এলসি কমেছে ৩৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, নিষ্পত্তি কমেছে ৩৯ শতাংশ। বিপি শিটের এলসি কমেছে ৬১ শতাংশ, নিষ্পত্তি ২৩ শতাংশ কমেছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, আলোচ্য সময় শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের এলসি কমেছে ২৯ শতাংশ, নিষ্পত্তি বেড়েছে ৪ শতাংশ। মৌলিক কাঁচামালের মধ্যে বীজের এলসি কমেছে ৫৬ শতাংশ, নিষ্পত্তি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। টেক্সটাইল ফেব্রিকসের এলসি কমেছে ২৯ শতাংশ, নিষ্পত্তি বেড়েছে ৩ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শিল্পের উপকরণ আমদানি কমার প্রধান কারণ ডলার সংকট। এ কারণে এলসিতে কড়াকড়ি। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং অনেকে মনে করেন বাড়তি দামে পণ্য কিনে বিক্রি করা যাবে না। শিল্পের উপকরণের এলসি খোলা কমার কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আগামীতে আরও সংকট তৈরি হবে। নতুন শিল্প নির্মাণ ও চালু শিল্পের কলেবর বাড়াতে বা আধুনিকায়নে যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময় যন্ত্রপাতির এলসি কমেছে ৬৭ শতাংশ, নিষ্পত্তি কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। শিল্পের যন্ত্রপাতির মধ্যে টেক্সটাইল মেশিনারিজের এলসি কমেছে ৭৭ শতাংশ, নিষ্পত্তি বেড়েছে ১৫৪ শতাংশ। চামড়া শিল্পের এলসি কমেছে ৫৫ শতাংশ, আমদানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। পাটশিল্পের এলসি কমেছে ৫৮ শতাংশ, আমদানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। গার্মেন্ট খাতের এলসি কমেছে ৬৭ শতাংশ।
অন্যদিকে শিল্প খাতের বিবিধ যন্ত্রপাতির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময় এলসি ৪৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও নিষ্পত্তি ২৩ শতাংশ কমেছে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, শিল্পের উপকরণ আমদানি কমার প্রধান কারণ ডলার সংকট। দ্বিতীয় কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং তৃতীয় কারণ অনেকে মনে করেন বাড়তি দামে পণ্য কিনে বিক্রি করা যাবে না। শিল্পের উপকরণের এলসি খোলা কমার কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে কিছু শিল্প ভালো থাকবে। এগুলোয় কর্মসংস্থানও হবে। অন্যান্য শিল্পের বিষয়ে এখন টিকে থাকার নীতি গ্রহণ করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব দেশে মন্দার আঘাত কম ওইসব দেশে নজর দিতে হবে। এবারের সংকটের মূল কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক। এর মধ্যে দেশে ডলার সংকট এ মন্দাকে প্রকট করেছে। এখন রেমিট্যান্সের দিকে বেশি জোর দিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়লে ও আমদানি কমলে ডলারের সংকট কমবে। তবে শিল্প খাতের আমদানি কমানো ঠিক হবে না। গত বছরের এপ্রিল থেকে মূল্যস্ফীতি, ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পণ্য আমদানিতে লাগাম দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একের পর এক নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।