বিদেশি ঋণ বেড়ে ৯৩ বিলিয়ন ডলার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৩৯ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:৩৬ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দেশের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। প্রতি বছরই সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই এ ঋণ বাড়ছে। ২০২২ সাল শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বা ৯ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলার। এক বছর আগেও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯০ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বা ৯ হাজার ৭৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিদেশি ঋণ বেড়েছে তিন বিলিয়ন ডলার বা ৩০০ কোটি ডলার, যা বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভের প্রায় তিনগুণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে সরকার বিদেশি ঋণ বাস্তবায়নের জন্য বেশকিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পগুলোই মূলত সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে অন্যতম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছর শেষে বিদেশি উৎস থেকে নেয়া ঋণের মধ্যে সরকারের ঋণ রয়েছে ৬৯ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এ ঋণের মধ্যে সরাসরি সরকারের ঋণ রয়েছে ৫৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। ঋণের পুরোটাই দীর্ঘমেয়াদি। বাকি ১১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান।
অপরদিকে ২০২২ সাল শেষে বিদেশি উৎস থেকে বেসরকারি খাতের ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ৭ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।
স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদেশি ঋণের এ উল্লম্ফন ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, দেশে এ মুহূর্তে ডলারের তীব্র সংকট চলছে। আগামীতে এ সংকট আরও গভীর হবে। এ অবস্থায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও চাপে পড়তে হবে। তাই এ ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। বেসরকারি খাতের ঋণের বেশিরভাগই বায়ার্স ক্রেডিট। ২০২২ সাল শেষে বায়ার্স ক্রেডিটের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার বা ৯৫৬ কোটি ডলারে। ২০২১ সালে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বায়ার্স ক্রেডিটের পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
বায়ার্স ক্রেডিটের এ ঋণ সাধারণত এক বছরের মধ্যে শোধ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বায়ার্স ক্রেডিট হচ্ছে দেশের আমদানিকারকের বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণ। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এসব ঋণ নিয়ে থাকেন। দুভাবে বায়ার্স ক্রেডিট নেয়া হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার অংশ হিসাবে আমদানিকারককে বাকিতে পণ্য সরবরাহ করে, যা ঋণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আমদানিকারককে পণ্য বুঝে পাওয়ার ছয় মাস পর ঋণ পরিশোধ করতে হয়। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানিকারককে ঋণের ব্যবস্থা করে পণ্যটি সরবরাহ করে। এতে রফতানিকারক অর্থ পেয়ে যায়, কিন্তু আমদানিকারক পরে ব্যাংককে ঋণ শোধ করে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য এসব ঋণের জোগান দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ পণ্যই ভোগ বিলাসে ব্যবহƒত হয়। খুব কম পণ্যই আসে শিল্পের কাঁচামাল বা সহযোগী যন্ত্রপাতি হিসেবে। সেবা খাতের জন্য কিছু পণ্য এ প্রক্রিয়ায় আমদানি করা হয়।
ঋণের এ দ্রুত বৃদ্ধির হার বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে, সেটি স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে সরকারি এমন কিছু প্রকল্পে বিদেশি ঋণ নেয়া হয়েছে, যেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এতে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যা অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে। আর সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে, রিজার্ভও কমছে। তাই বিদেশি ঋণ পরিশোধ আগামীতে ডলার ও রিজার্ভের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তখন বিনিময় হারেরও দ্রুত পরিবর্তন হবে।