রমজানকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত আমদানির পরও বাড়ছে খেজুরের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৪ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:০৭ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রমজানকে সামনে রেখে পাইকারি বাজারে বাড়তে শুরু করেছে খেজুরের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কার্টন (৫ কেজি) প্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারকরা বলছেন, এলসি জটিলতার কারণে আমদানি কম হয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিকারক দেশেই বেড়েছে খেজুরের দাম। যার প্রভাবে বাজারে খেজুরের দাম বাড়ছে।
ফলমুন্ডি এলাকার নিউ আঁখি এন্টারপ্রাইজের মালিক জাহাঙ্গীর সওদাগর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কিছু কিছু খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর যেসব খেজুর প্রতি কার্টন এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে সেগুলো দাম বেড়ে হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।’
ফলমুন্ডিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভালো মানের প্রতি কার্টন মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। এর চেয়ে কম মানের প্রতি কার্টন মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। প্রতি কার্টন আজোয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, মাসরুক খেজুর ২ হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, সাফারি ২ হাজার ৪০০ টাকায়, ছরা প্রতি কার্টন দুই হাজার এবং জাহেদী প্রতি কার্টন এক হাজার ৭০০ টাকায়।
অথচ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা খেজুরগুলোর বিল অব এন্ট্রি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমদানিতে প্রতি কেজির সর্বোচ্চ শুল্কায়ন মূল্য পড়ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য পড়ছে প্রতি কেজি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা। শুল্ককর পরিশোধ করার পর এই খেজুরগুলোই বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ এক হাজার, সর্বনিম্ন ২৫০ টাকায়।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে ৩০০ টন খেজুর আমদানি করেছে চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস’। গত ২৬ জানুয়ারি দাখিল করা এসব খেজুরের বিল অব এন্ট্রি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমদানি করা প্রতি কেজি খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য পড়েছে ৫৩ দশমিক ৮২ টাকা।
আমদানিকারকরা দাম বৃদ্ধির পেছনে সরবরাহ সংকটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করালেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত এক বছরে দেশে চাহিদার কাছাকাছি খেজুর আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা বছর দেশে এক লাখ টন খেজুরের চাহিদা থাকে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত এক বছরে এক লাখ টনের বেশি খেজুর আমদানি হয়েছে। শুধু মাত্র চট্টগ্রাম দিয়েই খেজুর আমদানি হয়েছে ৯০ হাজার টনের বেশি। এর বাইরে ঢাকা আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়েও এয়ার কার্গোতে অনেক খেজুর আমদানি করা হয়েছে।
উদ্ভিদ সংঘনিরোধ চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯০ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত সাত মাসে (জুন থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত) ৩০ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসে।
তবে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ফল আমদানিকারক এরাবিয়ান ডেটস সুপার শপের মালিক মো. শহিদুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডলারের কারণেই প্রতি কার্টনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেশি খরচ পড়ছে। এর বাইরে এখন সৌদি আরবেই খেজুরের দাম একটু বাড়তি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রপ্তানিকারক দেশগুলোতে জিনিসপত্রে দাম বেড়েছে। আমাদের দেশে এখন খেজুরের যেই দাম, সৌদিতে এর চেয়ে বেশি। সেই হিসেবে আমি বলব দেশে খেজুরের দাম বাড়েনি। আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব দামে পড়েছে।’