৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রজেক্ট
‘ভুয়া’ সনদে ৪৭ কোটি টাকার কাজ ঠিকাদারের পকেটে!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:১৪ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে ভুয়া সনদে ৪৭ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এম এস জিলানী ট্রেডার্স নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দিতে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও এস্টিমেটরের (মূল্যনির্ধারক) বিরুদ্ধে নয়-ছয়েরও অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ‘৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রজেক্টে’ এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রকল্প পরিচালক মো. মীর শহীদ ও এস্টিমেটর মো. মনির হোসেনের মদদেই কুমিল্লা ও জয়পুরহাটের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার জিলানী ট্রেডার্স। মানা হয়নি প্রচলিত বিধিবিধানও।
অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প পরিচালকের সহযোগিতায় ভুয়া সনদে আলাদা দুটি টেন্ডারে ৪৭ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে এম এস জিলানী ট্রেডার্স। কাজের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০ পার্সেন্ট (শতাংশ) বেশিতে ওই দুটি কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়ে দুই পার্সেন্ট কমিশন নিয়েছেন পিডি ও এস্টিমেটর। এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মানতে নারাজ প্রকল্প পরিচালক।
তিনি দাবি করেন, নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু হয়েছে। অভিজ্ঞতার সনদ এক্সিয়েন যাচাই-বাছাই করে দেয়ার পর পিডি হয়ে প্রধান প্রকৌশলী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও মন্ত্রীর অনুমোদনে কাজ পেয়েছে জিলানী ট্রেডার্স।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ওই জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মো. নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, পরিকল্পিতভাবে কাজ দুটি জিলানী ট্রেডার্সকে দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। কাজ পেতে ঠিকাদারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন এস্টিমেটর মো. মনির হোসেন। জিলানী ঠিকাদার যে সনদে কাজ পেয়েছে সেটিও এক্সিয়েনের সই নকল করে সাবমিট করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রকল্পের কুমিল্লা ও জয়পুরহাটের কাজ দুটি দেয়া হয়েছে। কাজ দুটি পেতে নিয়ম অনুযায়ী জিলানী ট্রেডার্সকে কমপ্লেশন সার্টিফিকেট (সমাপনী সনদ) দাখিলের কথা থাকলেও তিনি জমা দেন বরগুনা পৌরসভার কাজের একটি ‘এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট’ (অভিজ্ঞতার সনদ)। যদিও বরগুনা পৌরসভার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী এ টি এম মহিউদ্দিন খোন্দকার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের সই করা সার্টিফিকেটটিও ‘ভুয়া’ বলে জানা গেছে।
এদিকে, ‘এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট’ নামে যে কাগজ জিলানী ট্রেডার্স জমা দিয়েছে সাধারণত এসব কাজের অভিজ্ঞতার সনদ এটি না। মূলত এ ঠিকাদারি কাজে যে অভিজ্ঞতার সনদ লাগে সেটাকে বলে ‘কমপ্লেশন সার্টিফিকেট’। সেখানে প্রায় পাঁচজনের সই লাগে। যদিও জিলানীর পক্ষে উপস্থাপিত সার্টিফিকেটে মাত্র দুজনের সই ছিল। জিলানীর ওই ভুয়া সনদে পিডির সহযোগিতা ছাড়া কাজ পাওয়া সম্ভব না। অভিযোগ আছে, নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে আলাদা দুটি কাজ ১০ পার্সেন্ট (শতাংশ) বেশিতে জিলানী ট্রেডার্সকে দিয়েছেন পিডি। যেটা প্রকিউরমেন্ট বিধির সরাসরি লঙ্ঘন।
সিপিটিইউয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে যা বলা হয়েছে : ২০২০ সালের ২ মার্চ ‘৩০ পৌরসভা’ প্রকল্পের কুমিল্লা বিভাগের দরপত্র আহ্বান করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (আইডি নং- ৪২৬৪২১)। এ দরপত্রে একক কাজ হিসেবে ১৫ কোটি টাকার ‘পাইপড ওয়াটার স্কিম’ কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় অথবা দুই কন্ট্রাক্টে ১০ কোটি টাকার ‘পাইপড ওয়াটার স্কিম’ কাজের অভিজ্ঞতা থাকার কথা বলা হয়। এরপর ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি ‘৩০ পৌরসভা’ প্রকল্পের জয়পুরহাট বিভাগের দরপত্র আহ্বান করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (আইডি নং- ৪০৮৯৬৯)। এখানেও একক কাজ হিসেবে ১০ কোটি টাকার ‘পাইপড ওয়াটার স্কিম’ কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় অথবা দুই কন্ট্রাক্টে সাত কোটি টাকার ‘পাইপড ওয়াটার স্কিম’ কাজের অভিজ্ঞতা থাকার কথা বলা হয়।
পরবর্তীতে কাজ দুটিতে ঠিকাদার হিসেবে কার্যাদেশপ্রাপ্ত হয় মেসার্স জিলানী ট্রেডার্স। যদিও ওই কাজের জন্য জমা দেয়া সার্টিফিকেটে চাহিদা অনুযায়ী অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে সেসময়ে সার্টিফিকেটে উল্লেখিত কাজটিও সমাপ্ত হয়নি। টেন্ডার আহ্বান করার সময় যে সার্টিফিকেট আপলোড করা হয় সেটির কমপ্লেশন সময় দেয়া ছিল ২০১৯ সালের ১০ জুন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই সার্টিফিকেটও পরিবর্তন করা হয়। এখন মূল সার্টিফিকেটে কমপ্লেশন সময় দেয়া আছে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর। অর্থাৎ দরপত্র আহ্বানের ১১ মাস পর অভিজ্ঞতা হিসেবে জমা দেয়া সার্টিফিকেটের কাজ শেষ হয়। এছাড়া আপলোড করা সার্টিফিকেটটি ‘পাইপড ওয়াটার স্কিম’ কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নয়। যদিও এতে উল্লেখ আছে, ওভার হেড ট্যাংক ৬.১০ কোটি এবং এইচডিপি পাইপ লাইন ১১.০১ কোটি। এ হিসাবে কাজটি নন-রেসপনসিভ (অ-প্রতিক্রিয়াশীল) হয়।
সিপিটিইউতে পাঠানো চিঠিতে মো. নুরুল ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, জিলানী ট্রেডার্সের সার্টিফিকেটটি ভুয়া। মনের মতো ‘বানোয়াট’ সার্টিফিকেট বানিয়ে ডিপার্টমেন্টকে যাচাইয়ে সত্যতা দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে প্রকৃত ঠিকাদারকে কাজ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দরপত্র দুটি বাতিল করে জিলানী ট্রেডার্সের লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্তির অনুরোধ করেন তিনি।
২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদুজ্জান ৩০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করেন। কুমিল্লার ওই দরপত্রে একক কাজ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা অথবা দুই কন্ট্রাকে ১০ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। যদিও কুমিল্লার কাজে সাবমিট করা সার্টিফিকেটে চাহিদা অনুযায়ী অভিজ্ঞতা ছিল না জিলানী ট্রেডার্সের। যেই সার্টিফিকেট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দিয়েছিল সেটি বরগুনা পৌরসভায় কাজের অভিজ্ঞতার। পরবর্তীতে যেটি ভুয়া বলে জানা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা পৌরসভার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী এ টি এম মহিউদ্দিন খন্দকার।
তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্বাহী প্রকৌশলীর সই করা যে সার্টিফিকেট দাখিল করেছিল সেটি ভুয়া। টেন্ডার আহ্বান করার সময় জিলানী ট্রেডার্সের যে সার্টিফিকেট আপলোড করা হয়েছিল সেটির কমপ্লেশন তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ১০ জুন। অথচ মূল সার্টিফিকেটে বরগুনা পৌরসভার মেয়র, তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ পাঁচজনের সই ছিল। এছাড়া মূল সার্টিফিকেটে কমপ্লেশন তারিখ দেয়া আছে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর। যা এখনও ব্যবহার হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিলানী যদি ২০২০ সালের নভেম্বরে কমপ্লেশন সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে, তাহলে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারির টেন্ডারে কিভাবে কাজ পেল। এছাড়া ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির টেন্ডারে দাখিল করা ২০১৯ সালের ১০ জুনের সার্টিফিকেটটি কোথা থেকে পেল জিলানী ঠিকাদার? তবে, ২০১৯ সালের সার্টিফিকেটে যে নির্বাহী প্রকৌশলীর সই ছিল, সেটি ভুয়া বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন খন্দকার।
তিনি জানান, জিলানী ট্রেডার্সের সাবমিট করা ২০১৯ সালের সার্টিফিকেটটি আগের কোনো সার্টিফিকেট থেকে স্ক্যান করে বানানো।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিলানী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাজী মুহাম্মদ জিলানী হকের সঙ্গে কথা হয়। ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কিভাবে কাজ পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নটা আমি আপনাকে করতে পারি। আমি কিভাবে কাজ পেলাম? আপনি যে ভুয়া বললেন, কী জন্য? আমার সার্টিফিকেট যে প্রতিষ্ঠান ইস্যু করছে, আপনি সার্টিফিকেট নিয়ে সেখানে যান। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন। আপনি আগে তদন্ত করে দেখেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতেই পারে। আমিও আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারি। কিন্তু এটা বললে তো হবে না। সিপিটিইউতে যে অভিযোগ আছে চাইলে সেটি তারা তদন্ত করে দেখতে পারে।
নিজের সার্টিফিকেট সঠিক দাবি করে তিনি বলেন, সার্টিফিকেট তো আমি দেয়নি। সার্টিফিকেট যেহেতু প্রতিষ্ঠান দিয়েছে, সেহেতু সঠিক।
এ বিষয়ে বরগুনা পৌরসভার সাবেক এক্সিয়েন এ টি এম মহিউদ্দিন খন্দকার বলেন, আমি চাকরি থেকে অবসরে চলে এসেছি। আমার শরীরটাও ভালো না। আপনার পাঠানো সার্টিফিকেটটি আমি দেখেছি। সেখানে লেখা আছে এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট। এটা সম্ভবত স্ক্যান করা কপি। আপনি দেখেন, স্মারক নম্বরে অবলিক দিয়ে ওয়ান লাগানো। আমি এটাতে সই করিনি। ২০১৯ সালের সার্টিফিকেট স্ক্যান করে আমার সই নকল করা হয়েছে। এর প্রমাণ হচ্ছে স্মারক নম্বরে অবলিক দিয়ে কখনও ওয়ান হয় না। কপি দিলে অবলিক দিয়ে স্মারক নম্বর হয়। দ্বিতীয় বিষয় হলো ওই সার্টিফিকেটের হেডলাইনে লেখা এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট। কিন্তু আমরা যেটা দিয়েছি সেটাতে লেখা আছে কমপ্লেশন সার্টিফিকেট। কমপ্লেশন সার্টিফিকেট শত ভাগ ঠিক আছে। আগে যেটা দেখানো হয়েছে সেটা সম্ভবত স্ক্যান করা কপি। আমি আমার উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানকে জিজ্ঞেস করেছি। উনি জানালেন, এটা সম্ভবত স্ক্যান করে সই নকল করা হয়েছে। আমি এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেটে কোনো সই করিনি, এটা নিশ্চিত।
একটা বিষয় হচ্ছে, সার্টিফিকেট যাচাই করা ছাড়া কাজ দেয়া সম্ভব না। যদি সন্দেহ হয়, তাহলে অবশ্যই লোক পাঠিয়ে যাচাই করতে হয়। বড় কাজ হলে যে অফিস থেকে ঠিকাদারের অভিজ্ঞতার সনদ দেয়, প্রয়োজনে সেই অফিসে লোক পাঠিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করে নিতে হয়। আর ভুয়া সার্টিফিকেটে যে তারিখ দেখানো হয়েছে আমি সে সময় মাত্র জয়েন করেছিলাম বরগুনাতে। তাছাড়া, ওই সময় তৎকালীন কুমিল্লার এক্সিয়েনও আমার কাছে কোনো লোক পাঠাননি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকল্প পরিচালক ওই সার্টিফিকেটে কিভাবে কাজ দিলেন? তাদের তো সন্দেহ হওয়ার কথা ছিল। সন্দেহ হলে আমার কাছে লোক পাঠানোর কথা ছিল, যোগ করেন সাবেক এ কর্মকর্তা। ওই সময়ে কুমিল্লাতে টেন্ডারটি আহ্বান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদুজ্জামান। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তাকে টানা দুদিন ফোন দিলেও পাওয়া যায়নি। তবে, তিনদিনের মাথায় ফোন রিসিভ করলেও টেন্ডারটির বিস্তারিত শুনে তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি। পরে ফোন দিচ্ছি।’ এরপর ওনাকে ফোন দিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। আমি ওই কাজ দুটির জন্য যে অভিজ্ঞতা চেয়েছিলাম ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি সেই অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট দিয়েছিল। তাছাড়া, ওই সময়ে কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী জিলানী ট্রেডার্সের সার্টিফিকেট ভেরিফাই (যাচাই) করে আমাদের দিয়েছিল।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের ব্যাখ্যা : অসদুপায়ে জিলানী ট্রেডার্সকে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মীর শহীদ বলেন, আমি ওই কাজ দুটির জন্য যে অভিজ্ঞতা চেয়েছিলাম ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি সেই অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট দিয়েছিল। তাছাড়া, ওই সময়ে কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী জিলানী ট্রেডার্সের সার্টিফিকেট ভেরিফাই (যাচাই) করে আমাদের দিয়েছিল। আমরা যাচাই-বাছাইয়ের পর চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে এলজিইডি মন্ত্রীর মাধ্যমে এর অনুমোদন হয়েছে। ওই সময় যদি কেউ আমাদের তাৎক্ষণিকভাবে জানাত, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এখন তিন বছর পর আমরা কী করতে পারি? ওই সময় অভিযোগ আসলে আমরা আরও ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে পারতাম। এখন অভিযোগ আসলে আমরা কী করব? জিলানী আমাদের রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করেছে বলেই আমরা সেটাকে ফরোয়ার্ড করেছি।আপনি দুই পারসেন্ট কমিশনে কাজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বুঝলাম না তো! দুই পারসেন্ট নিয়েছি, সেটা মুখে বললেই তো হলো না। আমাদের যে রিকোয়ারমেন্ট ছিল সে অনুযায়ী আমরা সার্টিফিকেট পেয়েছি। পরবর্তীতে আমার কাছে কেউ কেউ অভিযোগ করেছে, জিলানীর ওই সার্টিফিকেট নাকি রানিং বিল ছিল। এটা আমার জানার বিষয় না, এটা রানিং বিল নাকি চূড়ান্ত বিল। তাছাড়া, আমি বাস্তবে তো আর সার্টিফিকেট যাচাই করতে যাইনি। যে সার্টিফিকেট আমাদের দেয়া হয়েছিল সেটা যদি সংশ্লিষ্ট পৌরসভা ভুল দেয় তাহলে তো আমাদের কিছুই করার থাকে না। ওই সময় কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন করে সঠিক পেয়েছিল। এ কারণে আমাদের কাছে ফরোয়ার্ড করেছে। আমরা নির্বাহী প্রকৌশলীর মূল্যায়ন প্রতিবেদনটা ঠিক মনে করে প্রধান প্রকৌশলী ও মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম। ১০ পারসেন্ট বেশিতে জিলানী ট্রেডার্স কিভাবে কাজ পেল— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী ‘এবোভ’ ও ‘লেস’-এ কাজ দেয়ার বিধান রয়েছে। টেন্ডার ও রি-টেন্ডার করতে গেলে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ছাড়া করা যায় না। আর যিনি টেন্ডার করেন সবকিছুর দায়িত্বও তার।
ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কুমিল্লা ও জয়পুরহাটের কাজ পাওয়ার অভিযোগ জিলানী ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি পরিকল্পিত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পিডি বলেন, এখনও আমাদের দৃষ্টিতে ভুয়া কিছু দেখিনি এবং বাস্তবে ফিল্ডে কী কাজ হয়েছে বা না হয়েছে, এটা আপনি ফিল্ড যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারেন। পিপিআর ও বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন ফলো করেই কাজ করা হয়েছে। এটা প্রকিউরমেন্ট আইনের ৬৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধ। এ অপরাধের দায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারিত (নিষিদ্ধ) বা ডেফার্ড (স্থগিত) করা যেতে পারে। বারিত করলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
এ বিষয়ে জানতে সিপিটিইউয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মাসুদ আকতার খান বলেন, এ বিষয়ে আমার ডিজি স্যার বলতে পারবেন। আপনি ওনাকে ফোন দেন। সিপিটিইউয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শোহেলের রহমান চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কোনো ঠিকাদার যদি ভুয়া সনদে কাজ পেয়ে থাকেন, তাহলে প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী তার কী ধরনের শাস্তি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিটিইউয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন বলেন, এটা প্রকিউরমেন্ট আইনের ৬৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধ। এ অপরাধের দায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারিত (নিষিদ্ধ) বা ডেফার্ড (স্থগিত) করা যেতে পারে। বারিত করলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিকাদারের ভুয়া সার্টিফিকেট যদি মূল্যায়ন কমিটি যাচাই করতে না পারে তাহলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা যেতে পারে।
আইনে বলা আছে, সেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতে পারে। আবার মামলা দুদকে হস্তান্তর করাও যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, পৌর এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটারি সুবিধা দিতে ‘৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। পৌরসভার সক্ষমতা বাড়ানোর এ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়। এর মাধ্যমে ছোট ছোট শহরের ছয় লাখ মানুষের নিরাপদ পানি পাওয়ার কথা।