বিদ্যুতের পর এবার বাড়ছে গ্যাস কোম্পানির সঞ্চালন চার্জ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:০৫ এএম, ১ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:০২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
গত ২৯ জানুয়ারি সরকারকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা দিয়ে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এর একদিনের মাথায় বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এবার গ্যাস কোম্পানির সঞ্চালন চার্জ বাড়ানো চূড়ান্ত করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
সূত্র জানায়, প্রথমে সুন্দরবন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম কোম্পানি লিমিটেডের বিতরণ চার্জ এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ এর সঞ্চালন চার্জ বাড়ানো হবে। যে কোনো সময় চার্জ বাড়ানোর ঘোষণা করা হবে। আদেশ যখনই হোক চলতি মাস (ফেব্রুয়ারি) থেকেই তা কার্যকর করা হবে।
এবিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্ট ড. শামসুল আলম বলেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কয়েক বছর ধরেই মুনাফা করে চলছে। কোম্পানিগুলো অনেক গোজামিল দিয়ে দাম বাড়িয়ে নিতে চায়। নির্বাহী আদেশে করা হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে। বিইআরসির শুনানিতে কিছুটা হলেও যাচাই-বাছাই করা হতো। এখন সেই জায়গাটিও নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এতে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার যেভাবে বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করছে, তা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের সঙ্গে আইনের নানা বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করেন না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ট্যারিফ নির্ধারণের কতগুলো ভিত্তি রয়েছে। ফ্রি অর্থনীতির মধ্যেও ট্যারিফের মাধ্যমে কিছুটা হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নির্বাহী আদেশে যেভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে, সেখানে কোম্পানিগুলো মুনাফা ফুলে ফেপে উঠবে। পেট্রোবাংলার সুবিধা পাওয়ার কোনো পথ উন্মুক্ত করা হয়নি। গেজেটে বলতে হতো, বাড়তি অর্থ পুরোটা পেট্রোবাংলা পাবে, তবেই প্রকৃত সফল পাওয়া যেতো। তা না হলে কর্নফুলী গত বছর ১৮ লাখ প্রফিট বোনাস দিয়েছে এ বছর এক কোটি করে দিব।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, চার্জ পুনঃনির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। কোম্পানিগুলো চাপাচাপি করবে সে কারণে গোপনে কাজ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি মুনাফা করলেও বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে জ্বালানি বিভাগে। মন্ত্রণালয় চার্জ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শিগগির এবিষয়ে আদেশ জারি হতে পারে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তাদের সঞ্চালন চার্জ ৫ গুণ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটারে ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৪ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
তিতাস গ্যাস ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৫ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তিতাসের মতো অন্যান্য গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি প্রতি বছরই মুনাফা করছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিতরণ চার্জ প্রতি ঘনমিটারে ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ১ টাকা ১৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ১৫ পয়সা। ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ১১ দফায় দাম বাড়ানোর ফলে বর্তমানে ইউনিটপ্রতি গড় মূল্য দাাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ এরই মধ্যে বর্তমান সরকার ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছে। সরকার আগামী এক বছরে বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ালেও প্রতি পাঁচ বছর মেয়াদে গড়ে মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে প্রায় ৫৪ শতাংশ।
এবিষয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের দাম এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে বাড়লে যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারের এই মূল্যবৃদ্ধি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
এবিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা বলেছি প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। গ্যাসের দাম বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো এপ্রিল থেকে কীভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস দিতে পারি, সেটারও ব্যবস্থা করা। ভোলার গ্যাস আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে দিতে পারবো।