বাংলাদেশে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল আদানির বিদ্যুৎ আমদানি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৫৫ পিএম, ৩১ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৫৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সংকটময় সময়ে আরও সংকটে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। তবে এবার বাংলাদেশকেও ডুবাতে চলেছে ভারতের এই গোষ্ঠী। এবার আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন ৩০ জন চাষি।
আজ মঙ্গলবার এই মামলা গ্রহণ করে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারক রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
আদানির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ঝাড়খন্ড থেকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার সময় কৃষি জমি নষ্টের অভিযোগ তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কার চাষিরা। গত বছরের জুলাই মাসে এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধে জড়ায় গ্রামবাসীরা। আহত হয় একাধিক গ্রামবাসী ও পুলিশ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক আম-লিচু বাগানের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছে আদানি।
গ্রামবাসীদের দাবি, এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও এলাকায় আমগাছ, লিচুগাছ রয়েছে। ওই আম-লিচুর ফলনের ওপরই নির্ভরশীল এলাকার মানুষ। তা থেকেই জীবন অতিবাহিত হয় তাদের। তার গেলে ফলনের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করে গ্রামবাসী। তাই অন্যদিক থেকে তার নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন ও আদানি গোষ্ঠী সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেয়।
এমন অবস্থায় জুলাই মাসেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় লুৎফর রহমান নামে এক ফল বাগিচা চাষি। সেই সময় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য পুরো মামলা শোনার পরে আদানি গোষ্ঠীর জমি কেনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিচারপতি। তবে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় যেহেতু খুঁটি পুঁতছে আদানি। তাই তাদের আদানির প্রকল্পের নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে। একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসককে ফারাক্কা এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ, কৃষকদের জমির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
এদিকে দীর্ঘ ৬ মাসে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তায় আদানির সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি চাষিদের। চাষবাস হারিয়ে উল্টো বিপাকে পড়েছে তারা। এমন অবস্থায় ফের আদানি গোষ্ঠী ও রাজ্য সরকারকে অভিযুক্ত করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ফারাক্কার ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ ফল বাগিচা চাষি। তাদের হয়ে গতকাল মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেন সিনিয়র আইনজীবী ঝুমা সেন। এর ফলে আদানির বিদ্যুৎ পাওয়ার ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বাংলাদেশের জন্য।
ফারাক্কার চাষিদের হয়ে মামলা লড়াই করা মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের কর্মী রণজিৎ সুর বলেন, জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। কারণ পুরো প্রক্রিয়া বেআইনিভাবে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে আদানি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাবে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আদানির কোনো চুক্তি নেই। একই সঙ্গে যাদের জমির ওপর থেকে সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও কোনো চুক্তি নেই, তাদের সম্মতিও নেয়া হয়নি। ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালন আইন বা বন সংরক্ষণ আইন কোনোটাই মানা হয়নি।
তিনি বলেন, তাই আমরা আদালতের কাছে চারটি আবেদন রেখেছি। ১) আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর আপাতত স্থগিতাদেশ দিতে হবে। ২) কোর্ট মনিটর এনকোয়ারি কমিটি গঠন করতে হবে। ৩) চাষিরা সম্মত হলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের লিজ চুক্তির মাধ্যমে প্রতিবছর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অথবা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে আদানি যে লাভ করবে তার লভ্যাংশ চাষিদের দিতে হবে। ৪) গাছ কাটার জন্য পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তার জন্যও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জুলাই মাসে চাষিদের সঙ্গে খ্ডযুদ্ধের সময় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেই চাষিদের সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।