ডলার সংকটে এলসি খোলায় জটিলতা
আমদানি কম, রমজানে বাড়তে পারে খেজুরের দাম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৩৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৫৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
গত কয়েক বছর রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ভালো ছিল। দামও ছিল নাগালের মধ্যে। তবে এ বছরের চিত্র ভিন্ন হতে পারে। এলসি খুলতে না পারায় চাহিদামতো খেজুর আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় রমজানে খেজুরের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং দামও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে সবচেয়ে বেশি খেজুর আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে। করোনা মহামারির কারণে গত কয়েক বছর সৌদি আরবে ওমরাহ ও হজ পালনে নানা বিধিনিষেধ ছিল। তাই দেশটিতে মানুষের সমাগমও ছিল কম। যার প্রভাব পড়ে খেজুরের বাজারে। খেজুরের চাহিদা কমায় ধস নামে দামেও। যার সুবিধা পায় বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর তুলনামূলক কম দামে খেজুর আমদানি করেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশের রিজার্ভ মজুত ও ডলার সংকট থেকে উত্তরণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ অন্যতম। এলসি খোলার ক্ষেত্রে লাগাম টানার জেরে কয়েক মাস খেজুর আমদানি করতে পারেননি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। গত বছরের শেষের দিকে খেজুর আমদানির জন্য এলসি খোলার অনুমতি পান ব্যবসায়ীরা। তারপরও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। এদিকে, যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে খেজুর আসে ওই সব দেশের মুদ্রার দামও টাকার চেয়ে বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে খেজুর আমদানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। যার প্রভাব ইতিমধ্যে পড়েছে দেশের বাজারে। সামনে আরও সংকট দেখা দিতে পারে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সারা বছরই দেশে কম-বেশি খেজুর আমদানি হয়। রমজানকে সামনে রেখে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যায়। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২ মাসে দেশে খেজুর এসেছে ১১ হাজার ৫৭০ টন। যা স্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। গত বছর রমজানের আগের কয়েকমাসে প্রায় ৩০ হাজার টন খেজুর এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ দিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ। আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, রোজায় বাজার স্বাভাবিক রাখতে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৭৫ হাজার টন খেজুর আমদানি করতে হবে। সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আমদানি অনেক কম।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক (ডিডি) নাছির উদ্দিন বলেন, ‘খেজুর আসা একেবারে বন্ধ হয়নি, পরিমাণে কম আসছে। এলসি-ডলার সমস্যার কারণে আমদানি কম হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বৈশ্বিক। এজন্য সরকারও গুরুত্ব দিচ্ছে অপ্রয়োজনীয় জিনিস এনে যাতে ডলার খরচ না করা হয়। খেজুর কিন্তু খুব জরুরি জিনিস নয়। আমরা ইফতারে খেজুর দুটিও খেতে পারি আবার পাঁচটিও খেতে পারি। এজন্য আগের চেয়ে কম আসলেই সংকট তৈরি হবে, বিষয়টি এমন নয়।’ রবিবার (২৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের স্টেশন রোড এলাকার ফলমন্ডি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব ধরনের খেজুরেরই দাম বেড়েছে।
সৌদি আরব থেকে আসা ৫ কেজি ওজনের এক বক্স আজোয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। যেটি গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। পাঁচ কেজি ওজনের এক বক্স মাবরুম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৪২০০ টাকায়। গত বছর এই খেজুর বিক্রি হয়েছিল ১৭০০ থেকে ২১০০ টাকায়। আবার মিসর থেকে আসা ৫ কেজি ওজনের মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৭০০ থেকে ৪৮০০ টাকায়। এই খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২৮০০ থেকে ৩৬০০ টাকায়।
একইভাবে সাফারি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ২৩৫০ টাকা, যা আগের বছর ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকায় পাওয়া গেছে। আম্বর খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৮০০ টাকায়, যেটি গত বছর ১৬০০ থেকে ২১০০ টাকা ছিল। দুবাই থেকে আসা ১০ কেজি ওজনের এক বক্স জাহেদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায়। গত বছর এই খেজুর বিক্রি হয়েছিল ৮৩০ থেকে ১০৫০ টাকা। ছড়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়, যেটি গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১০৫০ থেকে ১২৫০ টাকায়।
ফলমন্ডি বাজারের পাইকারি খেজুরের দোকান এরাবিয়ান ডেটস-এর স্বত্বাধিকারী মো. শহীদুল আলম বলেন, খেজুরের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। বাজারে সরবরাহ ৩০ শতাংশ কম। এর কারণ ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়া। এছাড়া কয়েক বছর লকডাউন থাকায় সৌদি আরবে হজ পালনে কম লোক গেছে। এজন্য সেখানে চাহিদা এবং দাম কম ছিল। এখন সেখানেও ওমরাহ এবং হজ পালনে প্রচুর লোক যাচ্ছে। সেখানে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। আবার সৌদি রিয়ালের মূল্য আগে ২২ টাকা ছিল, এখন ৩০ টাকা হয়েছে। এসব কারণে খেজুরের দাম বাড়ছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, রমজান সামনে রেখে খাতুনগঞ্জে এখনো খেজুর আসা শুরু হয়নি। এবার তুলনামূলক কম এলসি খোলা হয়েছে। আমদানি করা খেজুর এখনো পথে আছে।
তিনি বলেন, একমাস আগে যে দাম ছিল এখন সে তুলনায় বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় রমজানের আগে আগে দাম আরও বাড়বে।