দুই মাস আগেই রমজানের প্রভাব নিত্যপণ্যের বাজারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৫ পিএম, ২০ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৩২ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
রমজান শুরু হতে এখনও দুই মাস বাকি। এরই মধ্যে পণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। নতুন করে বেড়েছে ডিম, আদা, রসুন, ছোলা, মসুর ডাল, জিরা ও মসলাসহ কয়েকটি পণ্যের দাম। এর মধ্যে গত এক মাসে কাঁচা মরিচের কেজিতে দাম বেড়েছে ১২২ শতাংশেরও বেশি। এটি সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য।
টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর জিরার দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।
টিসিবির তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের এই সময়ে দেশি শুকনো মরিচের দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি। এখন সেই একই মরিচ কিনতে হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসেবে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৩২ শতাংশের বেশি। একইভাবে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। বর্তমানে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই রসুন। গত বছরের এই সময়ে ৪০ টাকায় এই রসুন পাওয়া যেতো।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, আদার দাম বেড়েছে ১১১ দশমিক ১১ শতাংশ। আদার কেজি এখন ২৮০ টাকা। একই পরিমাণ আদা গত বছরের এই সময়ে ৬০ টাকাতে পাওয়া যতো। এছাড়া গত এক বছরে অন্তত ৩৫ ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে ‘ডাবল ডিজিট’ হারে। এ ছাড়া শীতের ভরা মৌসুমে প্রায় সব ধরনের সবজির দামও চড়া।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সকল প্রকার সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। তবে গরু, খাসি, মুরগি ও ব্রয়লারের দাম আগের মতোই আছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে নতুন করে পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এলসি (ঋণপত্র) খোলা কমার কারণে ধীরে ধীরে পণ্যের দাম বাড়ছে।
বাজারের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আদার কেজি এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত এক সপ্তাহে চায়না আদার দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৪০ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে এক মাস আগে দাম ছিল আরও কম। তখন কেজি বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৬০ টাকায়। সেই হারে দেশি আদার দাম কিছুটা কম; কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। এ মানের আদার কেজি এক মাস আগে কেনা গেছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।
এছাড়া সপ্তাহখানেক আগে আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে কেনা গেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে জিরা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা এবং দারুচিনি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকার ছোট এলাচের কেজি দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। পাঁচ দিন আগে কেনা যেত ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়।
আমদানি করা মসুর ডাল (বড় দানা) কিনতে লাগছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এই মানের ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দের। দেশি মসুর (ছোট দানার) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে। এছাড়া এক সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডালের দাম এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আর মাছ বিক্রেতারা বলছেন, মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই দামে পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে অতিরিক্ত শীতের কারণে মাছ সরবরাহ কম হচ্ছে, ফলে মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার বাজারে কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, পাবদা ৪৫০ টাকা, মলা ৩৬০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ ২৬০ টাকা, বোয়াল ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, টেংরা ছোটগুলো ৫০০ আর বড় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রুই ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ এবং গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে শীতের ভরা মৌসুমেও সবজির দাম চড়া। সরবরাহ প্রচুর তবু সব সবজিতেই অতিরিক্ত ১০ থেকে ২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এক কেজি বেগুন কিনতে লাগছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। মুলার কেজিও এখনও ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। কাঁচামরিচের দাম মাঝে ক'দিন কমে আবার বেড়েছে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে শিমের কেজি ৩০ টাকার নিচে নেমেছিল। এখন বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পৌঁছেছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। করলার কেজি ৬০ থেকে ৭০, শসা ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ৩০ থেকে ৫০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে কিছুদিন স্বস্তিতে পার হওয়ার পর আবারও বেড়েছে ডিমের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। কোথাও কোথাও ১৫৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।
ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফার্মের মুরগির হালি বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়। হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। টিসিবি তথ্য বলছে, এক মাস আগে ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ছিল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। ডজন ছিল ১০৫ টাকা। সেখান থেকে হালিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়ে আজ ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে।
অবশ্য গরুর মাংস আগের মতোই ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় এবং ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।