৫২০০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষায় ৬৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:০৬ পিএম, ১৮ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:১৯ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বরিশাল জেলার বিঘাই, পায়রা ও কারখানা নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস। সম্প্রতি ওই এলাকার এই তিন নদীতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের প্রায় চার হাজার ৯০০ কোটি ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের স্থাপনাসহ আনুমানিক পাঁচ হাজার ২১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় ‘বরিশাল জেলার কারখানা, বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙন হতে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষা (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৬ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপপাশা ইউনিয়ননে প্রকল্প এলাকার কারখানা, বিঘাই এবং পায়রা নদীর ডান তীরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সেনানিবাস ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই তিনটি নদীর আট দশমিক ৫০ কিলোমিটার তীর রক্ষায় প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। কারণ এ ভাঙন রোধ করা খুবই জরুরি। না হলে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের প্রায় চার হাজার ৯০০ কোটি ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের স্থাপনাসহ আনুমানিক ৫ হাজার ২১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গ্রহণ করা প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়িত হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পানি সম্পদ সেক্টরের অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, নদী তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙন রোধ করে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন করা। এর সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া, এসডিজি’র নির্দেশক ‘৬.৫.১: সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার’ সঙ্গেও প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। একনেকের সভায় উপস্থাপনের আগে পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত শেখ হাসিনা সেনানিবাস ও তৎসংলগ্ন এলাকার জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ স্থানীয় জনগণের বাড়িঘর, ফসলি জমি, পাকা রাস্তা, মসজিদ, পুকুর ইত্যাদি বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এমন অবস্থায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘বরিশাল জেলার কারখানা, বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙন হতে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ৬৭৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেক-এ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়িত হলে বিঘাই ও পায়রা নদীর ভাঙন থেকে ওই এলাকার ঘরবাড়ি, স্থাপনা, জমি রক্ষা করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা সেনানিবাস হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সপ্তম পদাতিক ডিভিশনের কার্যালয়ে অবস্থিত একটি পরিকল্পনাধীন সেনানিবাস। এটি পটুয়াখালীর লেবুখালীতে অবস্থিত। এই সেনানিবাস এলাকার আয়তন মোট এক হাজার ৫৩২ একর। শেখ হাসিনা সেনানিবাস বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়নের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে এই প্রকল্পের সবুজ সংকেত দেন। তিনি সর্বপ্রথম ২০১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি শীতকালীন মহড়ায় এই সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। কমিশন সূত্রের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাসের প্রতিষ্ঠা, বরিশাল’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় এই সেনানিবাসের উদ্বোধন করেন।