ডলার সংকটে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব কমেছে বেনাপোলে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:১৩ পিএম, ১৫ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৩৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে পণ্য আমদানি কমেছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭৭১ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৬ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ দশমিক ৫৩ মেট্রিক টন। এই ৬ মাসে কাস্টমের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কাস্টম ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্য ও শিল্প কারখানার কিছু পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না। বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। আমদানি কম হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। গত বছর বেনাপোল কাস্টম হাউজে ৫৫৮ কোটি টাকা ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছিল। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয় ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয় ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ মেট্রিক টন।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আমদানি কমে গেছে। আমদানি কমলে রাজস্বও কম আসবে এটাই স্বাভাবিক।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বর্তমানে বেনাপোলসহ যশোরের কোনো ব্যাংক এলসি খুলছে না। যে কারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। এতে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পণ্য আনতে না পারার কারণে বিক্রি কমে গেছে। ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যে কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক খুলনা-বরিশাল জোনপ্রধান ফকির আক্তারুল আলম জানান, উচ্চ মার্জিনের কারণে সব ব্যাংকে এলসি কমেছে। ডলার সংকট কেটে গেলে আমদানি সহজ হয়ে আসবে।
ইস্টার্ন ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল হক জানান, ডলার সংকটে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি খুলছে না। এলসি করতে না পারলে পণ্য আমদানি কীভাবে করবে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান বাবলু জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেয়ার নিয়ম করেছে। কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থায় রয়েছেন। এখন আমদানিকারকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। একে তো বাণিজ্য ভালো নেই, তার ওপর পণ্য আমদানি করতে না পারলে আমদানির সঙ্গে জড়িতরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবেন। এছাড়াও কাস্টমের নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। কাস্টমকে টাকা দিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। তা না হলে বিভিন্ন অজুহাতে আমদানিকারকদের হয়রানির শিকার হতে হয় বলেও তিনি জানান। বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন জানান, ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে এলসি খুলতে পারছেন না। যে কারণে গত ৬ মাসে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। তবে এখানে কোনো হয়রানি হয় না বলে তিনি দাবি করেন।