গ্যাস সংকটে দিনে জ্বলছে না চুলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৬ পিএম, ১৩ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:১৫ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় গ্যাসের সংকটে চুলায় অল্প আঁচের যন্ত্রণায় রয়েছে অনেক এলাকার বাসিন্দা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্যাস থাকছে না কোনো কোনো এলাকায়। এতে গভীর রাতেও কারো কারো রান্না-বান্না সারতে হচ্ছে। জানা গেছে, এলএনজি আমদানি না করা পর্যন্ত এই সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন।
এখন দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ২,৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক প্রায় এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কম করা হচ্ছে। জানা গেছে, এখন গড়ে ৪২১ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। আর বাদবাকি অংশ দেশীয় খনির গ্যাস।
তিতাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, শীতে দুই কারণে গ্যাস সংকট দেখা যায়। একটি হচ্ছে- তাপমাত্রা কমে গেলে চাহিদার অতিরিক্ত গ্যাস প্রয়োজন হয়। সেটির সংস্থান না করতে পারলে সংকট হয়। অন্যদিকে গ্যাস বা মিথেন হচ্ছে হাইড্রোজেন এবং কার্বনের বন্ড। শীত এলে পাইপলাইনের মধ্য দিয়ে সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে পাইপলাইনের একেবারে শেষ প্রান্তের মানুষ তো বটেই এর আগেরও অনেকে গ্যাস কম পায়।
রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
সকালে উঠেই গ্যাস চলে যায়, আসে রাত দশটার পর। রান্নার কাজ আপাতত সব এলপিজি সিলিন্ডার দিয়েই চালাতে হয়। ফলে সিলিন্ডার কেনার খরচ একদিকে যেমন বেড়ে গেছে তেমনি আবার মাস শেষে গ্যাস বিলও দিতে হবে- এই অভিযোগ বনশ্রীর বাসিন্দা লিলি ইসলামের। একই অভিযোগ জানিয়েছেন রাজাবাজার থেকে জামাল হোসেনও। তিনি বলেন, ‘চায়ের দোকান চালাই। আগে লাইনের গ্যাসের চুলায় চা করতাম। আর এখন সকাল ১০টায় গ্যাস যায়, আসে সেই রাত দশটায়। সিলিন্ডার দিয়েই চা বানাই। ফুরিয়ে গেলে চা বিক্রি বন্ধ রাখি।’
কোথাও একেবারে গ্যাস নেই, আবার কোথাও গ্যাস থাকলেও চাপ কম। তবে অনেক এলাকায় আবার স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে বলেও জানা যায়।
একই ধরনের অভিযোগ খিলগাঁও, বাসাবো, মানিকনগর, পুরান ঢাকার বেশকিছু এলাকা, রামপুরার উলন, ওয়াপদা, মধুবাগসহ আরও কয়েক এলাকার বাসিন্দাদের৷
তিতাস সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার আশপাশের এলাকা সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ থাকছে না। ফলে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার শিল্প- কারখানাগুলোর।
গ্যাস সংকট কবে স্বাভাবিক হবে এ বিষয়ে খুব আশার খবর পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট কাটানো কঠিন। সরকার গত বছরের শেষ প্রান্তে এসে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। স্পট মার্কেট থেকে যতদিন এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হবে না ততদিন এই সংকট কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১,৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১,৫০০ মিলিয়নের মতো আমরা পাচ্ছি। প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে আমাদের। এছাড়া শীতের কারণে গ্যাস জমে যাওয়ায় পাইপলাইনের একেবারে শেষ প্রান্তের গ্রাহকের গ্যাসের সরবরাহ কম থাকে প্রায়ই।’