অর্থনৈতিক সংকটেও সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হাওরে উড়ালসড়ক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ১২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:১১ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
হাওর অঞ্চলে পাঁচ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে উড়ালসড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এখানে মূল উড়ালসড়ক নির্মাণে খরচ হবে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। আর বাকি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে জমি অধিগ্রহণ, জমিতে স্থাপনা বাবদ ক্ষতিপূরণ, উড়ালসড়কে সংযোগ সড়কের জন্য ছোট ছোট চারটি সেতু নির্মাণ এবং সড়ক প্রশস্ত করতে। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা থেকে শুরু হয়ে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালিতে গিয়ে শেষ হবে উড়ালসড়কটি। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, আগামী মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার বলছে, দেশ অর্থনৈতিক সংকটে। সবাইকে মিতব্যয়ী হতে আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারের বিভিন্ন পক্ষ থেকে। সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণে লাগাম টানা হয়েছে। জরুরি প্রকল্প ছাড়া অন্য প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই বিপুল ব্যয়ের এই উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে এতে অর্থ ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পের যত খরচ : প্রকল্পের নথি ঘেঁটে জানা যায়, ১৫ দশমিক ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে উড়ালসড়কটি নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। উড়ালসড়ক নির্মাণে ১৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু বিভাগকে। এই জমি অধিগ্রহণে খরচ হবে ২৬৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় মোট চারটি সেতু বানানো হবে। ২টি সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৩০ মিটারের। একটি ৩৩০ মিটার, অন্যটি ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু বানাতে খরচ পড়বে ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্প এলাকায় জমি অধিগ্রহণের ফলে ১ হাজার ১৩২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের ক্ষতিপূরণে সরকারের খরচ হবে ২৩০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তও করা হবে। সেখানে খরচ হবে ৪৩৩ কোটি টাকা। এসব ছাড়াও যানবাহনের জ্বালানি, অফিসভাড়া, নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য নানা খাতের খরচ মিলে মোট খরচ হবে ৫ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা।
কেন এই প্রকল্প : সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, উড়ালসড়কটি নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম উপজেলাসহ আশপাশের হাওর এলাকার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। এ ছাড়া ঢাকা, সিলেট ও অন্য জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। প্রকল্পটি ১৭ জানুয়ারি অনুমোদন পেলে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ করতে চায় সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ বলছে, উড়ালসড়ক নির্মিত হলে স্থানীয় পর্যটন বিকশিত হবে। হাওর অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়বে। নথি ঘেঁটে জানা যায়, অন্য প্রকল্পের তুলনায় এই প্রকল্পে জনবল নিয়োগের জন্য দ্রুত সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যেমন রাজধানীর বেইলি রোডে চার বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবন পড়ে আছে জনবলের অভাবে। রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর বাবা ও মায়ের নামে নির্মিত দুটি হল এক বছরের বেশি সময় ধরে খালি পড়ে আছে জনবলের অভাবে। কিন্তু উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্পে বিভিন্ন পদে ২০ জন জনবল নিয়োগের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ২৪ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটিতে জনবল নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। নথি ঘেঁটে জানা যায়, উড়ালসড়ক নির্মাণে পরামর্শকের পেছনে ৪৬ কোটি টাকা খরচ করবে সেতু বিভাগ। যদিও পরামর্শকের পেছনে খরচ কমিয়ে আনতে নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। সেতু বিভাগ বলছে, ২০৩০ সালে প্রতিদিন এই উড়ালসড়ক দিয়ে ২৫ হাজার ৮০০টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তো সবকিছু বন্ধ থাকবে না।