নতুন পাঠ্যক্রম চালু হলো যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৫ পিএম, ১ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:৫২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নতুন পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে রবিবার থেকে। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিক্ষকদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে না পারায় এর শুরুটা খানিকটা এলোমেলো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জের জন্য শিশুদের আরও ভালোভাবে তৈরি করার লক্ষ্যে পাঠ্যক্রম সংশোধন করেছে সরকার। প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন পাঠ্যক্রমভিত্তিক বই পেয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৪ সালে নতুন পাঠ্যক্রম কার্যকর হবে। পঞ্চম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নতুন বই পাবে। একটি পাঠ্যক্রম কার্যকর হওয়ার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সিলেবাসটি কার্যকরভাবে উপস্থাপনের জন্য একটি গাইড সরবরাহ করা হয়। তবে, তহবিল পেতে দেরি হওয়ায় নতুন পাঠ্যক্রম প্রকাশে দেরি হয়েছে। ফলে প্রাথমিক স্তরে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়নি।
কারিকুলাম উন্নয়ন ও পুনর্বিবেচনা বিষয়ক কোর কমিটির সদস্য মোহাম্মদ তারিক আহসানের মতে, পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং গাইড দেয়া। এক্ষেত্রে এর কোনোটিই করা হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনে ৪ লাখ ৩ হাজার শিক্ষক ২ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক তারিক আহসান বলেন, 'নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষকদের ভূমিকায় একটি বড় পরিবর্তন আসবে এবং তাদের প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক পাঠ্যক্রম) এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এখন শিক্ষকদের জন্য অনলাইন প্রশিক্ষণ সামগ্রীর চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে কাজ করছে। এটি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশিত হওয়ার কথা আছে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক শিক্ষকরা বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ২ ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণটি এখনো সম্পন্ন করা যায়নি। প্রত্যেকের ৫ দিনের প্রশিক্ষণ আগামী ৩ মাসের মধ্যে শেষ হবে।
দেরির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা গত এপ্রিলে টাকা পেয়েছি এবং তারপরেই রমজান চলে আসে। তাই আমরা সময়মতো এই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারিনি। তবে আমরা মনে করি না যে এটা নিয়ে শিক্ষকদের কোনো অসুবিধা হবে। প্রাথমিক স্তর আগে থেকেই দক্ষতাভিত্তিক ছিল। সাধারণত প্রথম বছরে প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তক পরীক্ষামূলকভাবে সংস্করণ করা হয় এবং পরবর্তী বছরের মুদ্রণে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়। তাই প্রয়োজনে বইগুলো সংশোধনের সুযোগ থাকবে বলে জানান হাসান। তবে মাধ্যমিক স্তরে এই পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। ৬২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের ইতোমধ্যেই একটি গাইড সরবরাহ করা হয়েছে।
এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যক্রম) মশিউজ্জামান বলেন, 'এর ফলে শ্রেণিকক্ষে পাঠ প্রদানে শিক্ষকদের খুব বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৮ হাজার ৮৭৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৩৭ লাখ শিক্ষক ৮৯ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন। নতুন কারিকুলামে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না এবং তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের পরীক্ষা হবে না। এসএসসি পরীক্ষা হবে মাত্র ৫টি বিষয়ে। সংশ্লিষ্ট শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পর ২ ধাপে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং উভয় পর্বের ফলাফল মিলিয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে।