স্বল্প আয়ের মানুষ সঞ্চয়পত্র থেকে খুব একটা সুবিধা পাচ্ছে না : পিআরআই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৮ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:০০ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ হয় তার ৭০ শতাংশের বেশি ধনীদের বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
আজ সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) পিআরআই কার্যালয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এবং গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক এ তথ্য জানান।
তারা বলেন, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ধনীদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ সঞ্চয়পত্র থেকে খুব একটা সুবিধা পাচ্ছে না। তাছাড়া যতদিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহার থাকবে ততদিন দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নতি হবে না।
এজন্য উচ্চহারে সুদ দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা উচিত না বলে অভিমত দিচ্ছে অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্রের মূল সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তারাই মূলত সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমাতে দেয় না।
‘ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাহিদী সাত্তার এবং পরিচালক বজলুল হক খন্দকার।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্রের মূল সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী গ্রুপ। তাদের কারণেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সম্ভব হয় না। আমাদের একটা গবেষণায় দেখেছি ৭০ শতাংশের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনেন ধনীরা। যতদিন সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের হার থাকবে ততদিন বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করবে না।
আর এম এ রাজ্জাক বলেন, সরকার যে রাজস্ব আয় করে তার ২০ শতাংশই সুদ পরিশোধের জন্য ব্যয় করতে হয়। সরকারের এই সুদব্যয় কমাতে হলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে হবে। উচ্চ হারে সুদ দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া উচিত না। সঞ্চয়পত্র দিয়ে বড় লোকদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের বদলে অন্য জায়গায় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে এম এ রাজ্জাক বলেন, আমাদের বাজেটের আকার মূলত জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদনের) ১৩ শতাংশের মতো। অর্থাৎ সরকার ব্যয় করে ১৩ শতাংশের মতো। অথচ পৃথিবীর গরিব দেশগুলোতেও গড়ে জিডিপির ২৪-২৫ শতাংশ ব্যয় করে সরকার। সরকারের ব্যয় বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়তে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের ব্যয় কম হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব না। এতে বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে। দেশে বহুদিন ধরেই এই বৈষম্য বাড়ার কথা বলা হচ্ছে।
শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির এক শতাংশের কম। শিক্ষায় কমপক্ষে জিডিপির ৪ শতাংশের সমান ব্যয় হওয়া উচিত। কম ব্যয় করার কারণে শিক্ষার মান কমছে। প্রতি বছর সাড়ে ৩ লাখের মতো জিপিএ-৫ পাচ্ছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে গেলে দেখবেন তারা বলছে যোগ্য জনবল পাচ্ছে না।
এম এ রাজ্জাক বলেন, স্বাস্থ্যে জিডিপির মাত্র দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়। অথচ স্বাস্থ্যে জিডিপির ৫ শতাংশ খরচ করা উচিত। স্বাস্থ্যে সরকার কম খরচ করায় গরিব মানুষ সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার বেশিরভাগ সরকার বহন করে। কিন্তু আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় ব্যক্তিকেই বহন করতে হয়। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবায় যে ব্যয় হয় তার ৭০ শতাংশ ব্যক্তি বহন করে। আর সরকার বহন করে ৩০ শতাংশের মতো। বিশ্বের চিত্র এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকারের খরচ কম। টিসিবির মাধ্যমে কমমূল্যে যেসব পণ্য বিক্রি করা হয়, সেই কর্মসূচি বাড়ানো গেলে গরিব মানুষগুলো সুবিধা পেতেন। কিন্তু বরাদ্দ না থাকার কারণে এই কার্যক্রম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ সময় সরকারি ব্যয় বাড়ানো এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কিছু উপায় তুলে ধরেন তিনি। এম এ রাজ্জাক বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে হলে একটা প্রোপার ট্যাক্স ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কর আদায়ে অটোমেশন করতে হবে। যদি সঠিক পলিসি থাকে জিডিপির ৬-৮ শতাংশ সরাসরি কর আনা সম্ভব।
কর-জিডিপির হার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, কর-জিডিপির রেশিও দিন দিন কমছে। আগামীতে আরও কমবে। কর-জিডিপির রেশিও ১২ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৭ শতাংশ হয়ে গেছে।