পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককের সংকট মেটাতে ৪,০০০ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৩ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৮ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
দেশের শরীয়াহভিত্তিক পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে তাদের তারল্য সংকট মেটাতে ৪,০০০ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোকে গত দুইদিনে (মঙ্গল ও বুধবার) বিতরণ করা হয়েছে ৩,২০০ কোটি টাকা। নগদ সংকটে পড়া এই ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসএইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গতকাল বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আবেদনকারী ব্যাংকগুলোর জন্য ইতিমধ্যে ৪,০০০ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার ২,০০০ কেটি টাকা এবং গতকাল বুধবার ১,২০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারল্য সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংকগুলোকে তহবিল সহায়তা প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ইসলামিক ব্যাংক লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ)’ প্রবর্তন করে। এই স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধের সময়কাল হবে ১৪ দিন। ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দেয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে সুকুক ইসলামী বন্ডের বিপরীতে এই ঋণ মঞ্জুর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে বর্তমানে ১০টি ইসলামী ব্যাংক চালু রয়েছে। এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এসএইবিএল, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় বাংকের ঋণ পাওয়া পাঁচটি ব্যাংকসহ অন্তত ছয়টি ইসলামী ব্যাংক বড় ধরনের তারল্য সংকটের মুখে আছে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, কোভিড-১৯ মহামারির পর ক্রমবর্ধমান আমদানির অর্থ পরিশোধ এবং ঋণ প্রদানে সাম্প্রতিক অনিয়ম ইসলামী ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের প্রধান কারণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ইসলামী ব্যাংকে আগে কোনো তারল্যের ঘাটতি ছিল না, সেসব ঋণদাতা ব্যাংকগুলোও এখন প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে তারল্যের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের কারণে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আমানতকারী এখন ব্যাংক থেকে তাদের অর্থ তুলে নিচ্ছেন যা তারল্যের ঘাটতির অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১,৬৯,৫৮৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছিল ২,১১,৫০৬ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের থেকে ডলার বিক্রিও ব্যাঙ্কগুললোর তারল্যের ওপর প্রভাব ফেলে কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাঙ্কগুলোর কাছে ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে এবং ব্যাঙ্কগুলো থেকে স্থানীয় মুদ্রার সমপরিমাণ অর্থ প্রত্যাহার করে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অর্থবছরে তার রিজার্ভ থেকে ব্যাঙ্কগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার তারল্য প্রদান করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে সঙ্কটের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গত সোমবার শরীয়াহসম্মত ব্যাংকগুলোতে তারল্য সুবিধা দেয়ার জন্য একটি নীতি চালু করেছে। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক “ইসলামিক ব্যাংক লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ)” শিরোনামে একটি নির্দেশিকা জারি করে। নির্দেশিকা অনুসারে, তারল্য সহায়তার মেয়াদ হবে ১৪ দিন এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো তারল্য সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিকা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গাইডলাইনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে চলতি হিসাব রক্ষণাবেক্ষণকারী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো আইবিএলএফের জন্য যোগ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদারাবাহ চুক্তির অধীনে তারল্য সুবিধা প্রদান করবে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগকারী হিসাবে কাজ করে এবং ব্যাংকগুলো একটি সম্মত লাভ শেয়ারিং রেশিও (পিএসআর)-এর অধীনে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক হিসাবে কাজ করে। ১৪ দিনের মেয়াদের আইবিএলএফ লাভের হার সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের তিন মাসের মুদারাবা মেয়াদি আমানত মুনাফার সমান হবে। ইসলামী ঋণদাতারা বিবি গাইডলাইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ফর্মের মাধ্যমে মতিঝিল অফিসের সিকিউরিটিজ বিভাগে আইবিএলএফের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইবিএলএফকে প্রদান করা হবে।