কমেছে আখ চাষ, ১০ বছরে দাম বেড়েছে মণে ৮০ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৫ পিএম, ২৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫৮ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সুগার মিলের প্রাণ আখ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই আখ চাষ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বছরের একটি সময় রুটিন অনুযায়ী খুলছে চিনিকল। কখনও এক মাস, কখনও দেড় থেকে দুই মাস আবার কখনও তার থেকেও কম। এতে লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। সরকার গত ১০ বছরে পাঁচ দফায় আখের দাম বাড়িয়েছে প্রতি মণে ৮০ টাকা। এখন প্রশ্ন হলো আখ চাষ বাড়ল কতটুকু? তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, বিগত মৌসুমের চেয়ে এই মৌসুমে আখ চাষ কিছুটা বেড়েছে। আখের চাষ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে আখের দাম প্রতি মণে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আখ চাষের ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে। আখের উন্নতজাত ও চিনি বেশি উৎপাদনে বিদেশ থেকে আখের বীজ আনা হবে বলেও জানা গেছে।
রাজশাহী চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১০-২০১১ মৌসুমে প্রতি মণ (৪০ কেজি) আখের দাম ছিল ৮৮ দশমিক ৯৫ টাকা। ১১ টাকা ০৫ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১-১২ মৌসুমে প্রতি মণ আখের দাম দাঁড়ায় ১০০ টাকা। এরপর চার বছর আর বাড়েনি আখের দাম। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ১০ টাকা বেড়ে দাম হয় ১১০ টাকা হয়। এক বছর পর ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১৫ টাকা বেড়ে দাম ১২৫ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় চাষিদের থেকে আখ কেনে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ। এরপর তিন বছর দাম বাড়েনি আখের। সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৪০ টাকা বেড়েছে। এ বছর ১৮০ টাকা মণ দরে আখ কিনবে রাজশাহী সুগার মিল কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী সুগার মিলের একটি সূত্র জানায়, গত সাত থেকে ১০ বছরে আখচাষির সংখ্যা কমেছে অনেক। এক সময় চাষির সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার। বর্তমানে কমে চার হাজারের ঘরে ঠেকেছে। এদিকে ২০২০-২০২১ মৌসুমে মাত্র ১৯ দিন মিল চালু ছিল। চিনি উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০২০ মৌসুমে মাত্র ৯১ দিনে চিনি উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন। এই মৌসুমের ২২ নভেম্বর শুরু হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মিল চলেছে। এর আগে ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে ৬৭ দিন আখ মাড়াই চলার কথা থাকলেও চলে ৫৮ দিন। তার আগের মৌসুমে ৬৭ দিনে ৯৩ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৪৪৮ টন চিনি উৎপাদন হয়। সর্বশেষ আগামী ২ ডিসেম্বর ২০২২-২৩ মৌসুমে আখ মাড়ায় শুরু হবে। ৩২ দিনে ৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ সময় রাজশাহীর হরিয়ান সুগার মিলে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হবে। এছাড়া ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ আবাদ হয়েছে। ৪ হাজার ৩৬ একর জমিতে আবাদ করা আখ থেকে ৬৫ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন আখ কারখানায় সরবরাহের মাধ্যমে ৪ হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হবে। আর এ সময় ২ হাজার ৪০০ মেট্রিন টন চিটাগুড় উৎপাদন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাজশাহী চিনি কলের ডিজিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ২০২০-২০২১ মৌসুমে মিল জোন এলাকায় ৩ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে আখের চাষ হয়েছিল। এই মৌসুমে আখচাষির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন। তার পরের বছর ২০২১-২০২২ মৌসুমে বেড়ে ৪ হাজার ৩৬ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এই মৌসুমে আখচাষির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৮৫ জন। এছাড়া চিনিকলে চিনি মজুত আছে ৯১ টন।
সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ : আখ চাষের উপযোগী জমিতে ব্যাপকভাবে ফলের বাগান, পুকুর খনন ও ইট ভাটা করায় আখ উৎপাদন ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী এই মিলের সার ও কীটনাশক পার্শ্ববর্তী নাটোর ও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে পাঠানোয় ২০২০-২০২১ মৌসুমে সময় মতো চাষিদের কৃষি উপকরণ (সার, কীটনাশক ও নগদ ঋণ) দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সুষম মাত্রায় প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়। তাছাড়া আখচাষিদের সময়মতো আখের মূল্য পরিশোধ না করায় তারা স্বল্পমেয়াদী অন্যান্য ফসল চাষের দিকে যাচ্ছেন। মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদিও সময়মতো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সুগার মিল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : উচ্চ ফলনশীল ও অধিক চিনি সমৃদ্ধ উন্নত আখের জাত প্রতিস্থাপন এবং চাষিদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সময়মতো সার, কীটনাশক ও ভর্তুকি প্রদান ও আখের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করা। আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজশাহী চিনিকলে ম্যাংগো প্রসেসিং প্লান্ট ও ম্যাংগো ড্রিংক বোতলজাতকরণ কারখানা স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ এবং আধুনিকায়ন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং পণ্য বহুমুখীকরণার্থে উপজাতভিত্তিক শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প গ্রহণে সহায়তা, কারখানা ভবন, আবাসিক ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত, অপরিচলন খাতে (ক্লাব ভাড়া, দোকান ভাড়া, ফলের বাগান, পুকুরে মাছ চাষ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে) প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
এ বিষয়ে রাজশাহী সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল বাশার বলেন, সুগার মিলকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় তার জন্য ৫ বছরের রোড ম্যাপ করা হয়েছে। উন্নতজাতের আখ রোপণ করা হবে যেন ফলন বৃদ্ধি পায়। চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি বাই প্রোডাক্ট থেকে কিভাবে অন্য প্রোডাক্টে যাওয়া যায় সেটা ভাবা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ডোর টু ডোর যাচ্ছি, চাষিদের কথা শুনছি। চাষিদের সার, কীটনাশক প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া সরকার আখের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে আখ চাষ বেড়েছে।