অনেক ব্যাংকে ডলার নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৫২ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ডলার সংকটে আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে দেশের অনেক ব্যাংক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতেও এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করছে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় থেকে আসা ডলার দিয়েও নিজেদের আমদানি দায় এবং গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। শুধু তাই নয়, ২-৩ লাখ ডলারের এলসি খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না ব্যাংক কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সব ব্যাংকই সাধারণ গ্রাহকদের আমদানির এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এলসি খুলতে গ্রাহকরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের কাছে তদবিরও করছেন। তবে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই এলসি খুলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ডলারের কিছু সংকট থাকলেও এলসি খোলা বন্ধের কোনও নির্দেশনা দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক’।
তিনি বলেন, ‘সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো পণ্যের বিপরীতে এলসি খুলছে। গত ১০ দিনে ৫৫টি ব্যাংক পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলেছে’। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলার সরবরাহ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা হবে’। তবে একাধিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা (এমডি) বলেছেন, নিজেরা ডলার সংস্থান করতে না পারলে আপাতত এলসি না খুলতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নাম প্রকাশ না করে বলেন, দেশের অন্তত ২২ থেকে ২৩টি ব্যাংকের কাছে ঋণপত্র (এলসি) দায় মেটানোর মতো কোনও ডলার নেই। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়েই ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। জানা গেছে, অনেক ব্যাংক খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলাও বন্ধ রেখেছে। যে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে এখনও ডলার আছে, সেগুলোও কমে আসছে। আর এই সংকটের কারণে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের অনুমোদিত ডলার সংরক্ষণের ক্ষমতা পাঁচ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ আমদানি দায় পরিশোধের পরও এ পরিমাণ ডলার নিজেদের হিসাবে সংরক্ষণ করতে পারে ব্যাংকটি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির কাছে বর্তমানে দায় মেটানোর মতো কোনও ডলারই নেই। উল্টো ২৫৬ মিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করে ফেলেছে ব্যাংকটি।
আর সংকটের কারণে সময়মতো এলসির দায়ও পরিশোধ করতে পারছে না। এমনকি এলসি দায় পরিশোধে বিলম্ব ব্যাংকটির নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের মতো এই পরিস্থিতি এখন দেশের অধিকাংশ ব্যাংকেরই। কোনও কোনও এলসির দায় পরিশোধে এক মাসও বিলম্ব হচ্ছে। এ অবস্থায় এলসির নিশ্চয়তা দেয়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদেশি অনেক ব্যাংকই এখন বাংলাদেশের জন্য নিজেদের ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মাশরেক ব্যাংক, আবুধাবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (এডিসিবি), জার্মানিভিত্তিক কমার্জ ব্যাংক, ভারতের অ্যাক্সিস ব্যাংকের বেশ কিছু এলসি দায় নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের ব্যাংকগুলো। এমনকি সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মতো দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকও নির্ধারিত সময়ে এলসি দায় পরিশোধ করতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রায় ৩০ শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আবার রফতানি আয়ের দিক থেকেও ব্যাংকটির অবস্থান সবার শীর্ষে। তারপরও আমদানি দায় পরিশোধ নিয়ে বিপদে আছে ব্যাংকটি। ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এরই মধ্যে বেশ কিছু এলসি দায় পরিশোধে বিলম্ব করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসের শেষের দিকে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলার চাহিদা এসেছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানার রূপালী ব্যাংকে। ওই এলসি ফেরত দেয় ব্যাংকটি। আরেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক দেশের বাইরে বিভিন্ন অংকের ৩৩টি পরিশোধের বিপরীতে ১০৫ কোটি টাকা পাঠানোয় অপারগতা জানিয়েছে। উভয়ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও বিনিময় হারজনিত লোকসানের কথা বলা হয়েছে। গত ১ আগস্ট সোনালী এবং ২৮ জুলাই রূপালী ব্যাংক এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়। এভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক এলসি ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। তবে বেসরকারি খাতের এলসি না খোলার ঘটনা ঘটেছে অহরহ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলো নিজেদের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারে। কিন্তু অনেক ব্যাংক এখন ঘাটতিতে রয়েছে। এদিকে নিজেদের সংকটের কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তুলে ধরেন ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা। ব্যাংক নির্বাহীরা ডলার সংকটের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা চান।
এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ৭০ শতাংশই রেমিট্যান্স থেকে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এ কারণে আমদানির এলসি খুলতে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে।
এদিকে ডলার সংকটের সমাধান চেয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যমান ডলার সংকটের কারণে রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ও ইউসেন্স পেঅ্যাবল এট সাইটের (ইউপিএএস) অধীনে বাণিজ্যিক ব্যাংকে কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত ১১ সেপ্টেম্বর বিটিএমএ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে, প্রচুর রফতানি চাহিদা পাওয়ার পরও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। তুলা, পলিয়েস্টার স্টেপল ফাইবার (পিএসএফ) এবং ভিসকস স্টেপল ফাইবার (ভিএসএফ) আমদানি করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের। ব্যাংকগুলোর এলসি খুলতে অনাগ্রহের কারণে টেক্সটাইল এবং পোশাক সামগ্রীর উৎপাদন এবং রফতানিতে খারাপ প্রভাব পড়বে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, টেক্সটাইল মিলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন এবং রফতানি কার্যক্রমের জন্য কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ মাসের কাঁচামাল মজুত থাকতে হয়। এছাড়া আমদানি করা কাঁচামাল পেতেও প্রায় তিন থেকে চার মাস সময় লাগে।
টেক্সটাইল মিলার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশীয় পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক কোম্পানিগুলোর কাছে যে কাঁচামাল রয়েছে তা দিয়ে আগামী তিন মাস উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়ার এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। ফলে বাস্তবে আগামী দুই মাস উৎপাদন কার্যক্রম চলবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি না খুললে অনেক স্পিনিং মিলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, উৎপাদন কমে গেলে বিদ্যমান ডলার সংকট আরও বাড়বে কেননা এটি রফতানি আয়কেও প্রভাবিত করবে। এছাড়া অনেকে চাকরি হারাবেন। বেকারত্বও বেড়ে যাবে। এদিকে শিল্পের উৎপাদনের যন্ত্রপাতি আমদানিও কমে গেছে। শিল্প স্থাপনের নতুন প্রকল্প, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও সংস্কারের নতুন তেমন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাই-আগস্টে শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানির ঋণপত্র খোলা ৬৫ শতাংশ কমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি খোলা কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের উৎপাদন, রফতানি ও কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ব্যাংকগুলো এলসি না খোলার কারণে অনেকেই এখন হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। এতে করে নতুন সব কারখানা নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-আগস্টে শিল্পের উৎপাদনের যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৪০ কোটি ডলারের, গত বছরের একই সময়ে খোলা হয়েছিল ১১৫ কোটি ডলারের ঋণপত্র। ফলে ঋণপত্র খোলা কমেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশে আমদানি হওয়া মূলধনি যন্ত্রপাতির বড় অংশই ব্যবহৃত হয় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে। গত অর্থবছরে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৬৪৬ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। আর ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল ৫২৬ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ব্যাংক খাতে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় মূল্য ১০৮ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ১১৫ টাকার বেশি। দরের এ তারতম্যের কারণে অবৈধ হুন্ডির বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের একটি অংশ হুন্ডিতে চলে যাওয়ায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এ কারণে আমদানির এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছে না ব্যাংকগুলো।
মূলত, মূল্যস্ফীতির লাগাম আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ডলারের সংকট কাটাতে সরকার আমদানিতে কড়াকড়ি করেছে। এখন ৩০ লাখ ডলারের ঋণপত্র খুলতে হলে ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে গত আগস্টের তুলনায় গত সেপ্টেম্বরে দেশের রফতানি আয় ৬.২৪ শতাংশ কমেছে এবং রেমিট্যান্স ২৫ শতাংশ কমে ১.৫৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে যা সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে নেট রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দেখানো হচ্ছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই রিজার্ভ হ্রাস রোধে সরকার সরকারি আমদানি ছাড়া সব ধরনের পণ্যের ওপর শতভাগ এলসি মার্জিন ঘোষণা করেছে। ফলে আমদানির পরিমাণ কমেছে।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শতভাগ মার্জিন দিয়েও ব্যাংক থেকে গাড়ি আমদানির জন্য কোনও এলসি খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। এতে গাড়ি আমদানি প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি ও কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ হাবীব উল্লাহ ডন বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে শতভাগ মার্জিন দিয়েও আমরা সরকারের সঙ্গে থাকছি। তারপরও বিভিন্ন কাগজপত্রের নামে ব্যাংকগুলো গাড়ি আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন থেকে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার নিম্নমুখী। আমদানিকারকরা জুনে ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছিলেন, যা সেপ্টেম্বরে ৫.৭০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এদিকে আমদানি নীতি কঠিন করার কারণে সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে যায় ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে। গত আগস্ট মাসেও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে দেশের ব্যাংকগুলোয় এলসি খোলা হয়েছিল ৯৮০ কোটি ডলারের। সেপ্টেম্বরে নতুন এলসি খোলার পরিমাণ ৫৭০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। মূলত ব্যাংকগুলোর অপারগতার কারণেই আমদানির এলসি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যা তার আগের মাস আগস্টের তুলনায় ৬৩ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ শতাংশ কম। সেপ্টেম্বরে আমদানি এলসি নিষ্পত্তিও আগের মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে। আগের মাস আগস্টে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৩৩ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে। এছাড়া গত অর্থবছরে রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বাণিজ্য ঘাটতি ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।