৮ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৮ পিএম, ১৫ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১২:০৪ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
খেলাপি ঋণের পাশাপাশি বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে দেশের ৮ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটি সরকারি ও বাকি ৪টি বেসরকারি খাতের ব্যাংক। সরকারি চার ব্যাংক হলো বেসিক ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো হলো স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। তবে সম্মিলিতভাবে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি চার ব্যাংক ও বেসরকারি চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। কিছু কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর আগে, গত জুন শেষে ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলো যেসব ঋণ বিতরণ করে নিয়ম অনুযায়ী তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ (খেলাপি) ঋণে পরিণত হলে তাতে ব্যাংক যেন আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বিধান রয়েছে। ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। এছাড়া সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়। কিন্তু উল্লেখিত আট ব্যাংক ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। জানা যায়, প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি খাতের ৪টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। সরকারি খাতের এই ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৩ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক, তিন হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। এছাড়া চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা।