শীতের সবজির দাম চড়া : স্বস্তি নেই মাছ-চিনি-চালেও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪০ পিএম, ২৮ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:০২ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোপা আমনসহ কৃষকের অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত শীতকালীন সবজির মাঠ লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সিত্রাংয়ের তান্ডব। সপ্তাহ না ঘুরতেই এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য অনেক পণ্যের মতো শীতকালীন সবজির দামও চড়া। ডিম-চিনিতেও মেলেনি স্বস্তি। কমেনি মাছ-মাংস ও চালের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক কৃষকের সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। এ কারণে দামও চড়া। এছাড়া চলতি সপ্তাহ থেকে বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসীয়ারা। তবে এখনো নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশিতে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০-১২০ টাকা দামে। এছাড়া বাজারে মাছ-মাংস, সবজি, চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিনে আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিরপুরের মুসলিম বাজার, ১১ ও ৬ নম্বর বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে চিচিঙ্গা, বেগুন, পটল, ঢ্যাঁড়স ও কাঁকরোলসহ সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে অন্তত ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিন বাজারে প্রতি কেজি পেঁপে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ২০-২৫ টাকা। এছাড়া পটল ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০-৮০ টাকা, গোল বেগুন ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, শিম ১০০-১২০ টাকা, টমেটো ও গাজর ১৪০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, করলা ৬০-৬৫ টাকা, ফুলকপি প্রতি জোড়া ১৩০ টাকা, বাঁধা কপি ৬০ টাকা, লাউ ৪০-৭০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, মানভেদে কাঁচামরিচ ১০০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও চিচিঙ্গা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও খুচরা বিক্রেতারা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দাম বাড়ার অজুহাত দিয়ে বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে টানা বৃষ্টিতে অনেক কৃষকের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। এর ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির জোগান অনেক কমেছে। সবজির দাম বাড়লে স্থিতিশীল আছে ডিম ও মাংসের বাজার। ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪৫ টাকা, হাসের ডিম ২১০ আর দেশি মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০, পাকিস্তানি কক ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৩০-৫৫০ টাকায়, দেশি হাঁস ৪২০-৪৫০ কেজি আর কবুতর প্রতি জোড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। অন্যদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। বাজারে গতকাল গরুর মাংস ৭০০ টাকা আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে। বাজারে চালের দামও রয়েছে স্থিতিশীল।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৩-৭৫ টাকা, আটাশ ৫৫-৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৮৩-৯১ টাকা, মোটা চাল ৪৮-৫৫ টাকা, চিকন চাল ৭০-৮০ টাকা, কাটারি ৬০-৬৫ টাকা, আটাশ ৪৮-৫৫ টাকা এবং পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি দরে।
মুসলিম বাজারের রহমান স্টোরের বিক্রয়কর্মী আরিফ বলেন, এ মাসের শুরুতে কিছুটা অস্থিতিশীল ছিল চালের বাজার। কিন্তু এখন আর আগের মতো দাম ওঠা-নাম করছে না। সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে চালের বাজার কেমন হবে, তা বলা যাচ্ছে না। সপ্তাহের শেষ দিন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, রসুন ১২০-১৩০ টাকা ও আদা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজারে পৌঁছায়নি সরকার নির্ধারিত দামের চিনি।
যদিও গত সোমবার ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার থেকে সরকার নির্ধারিত দাম, অর্থাৎ প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি করা হবে। বাজারে চিনির সংকট থাকবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারা। তবে এরপর পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। মিরপুর ৬ নম্বর এলাকার আল আমিম স্টোর সেন্টারের ব্যবসায়ী মাহমুদ জানিয়েছেন, এখনো নতুন দামের চিনি হাতে পাননি তারা। চিনির দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া। এদিকে আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। প্রতি কেজি রুই ২৬০-২৭০ টাকা, কাঁচকি ৭০০, পাবদা ৬০০, রূপচাঁদা ১ হাজার ১০০ এবং তেলাপিয়া ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন শিবলু আনসারি।
সকালে বাজার করতে এসে তিনি বলেন, প্রতিদিন বাজারে পণ্যের দামে নতুন নতুন রেট হয়। দাম শুধু বাড়েই, কমে না। দাম বাড়লে খাওয়া বন্ধ করি নয়তো কম কিনি। এভাবে চললে কদিন পর মানুষ ঘাস পাতা খাওয়া শুরু করবে। অন্যদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাসমূহের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে শামসুন নাহার নামের একজন গৃহিণী বলেন, আমরা অভিযান দেখি, কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। যে কোনো সবজি এখন ৬০ টাকা কেজির কম কেনা যাচ্ছে না। ৩০ টাকার কম কোন শাকের আঁটি নেই। মাস মাস পরিবারগুলোর খরচ বাড়ছে। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় বাড়ছে না।