এক কেজি চিনির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২০ পিএম, ২৫ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২০ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজধানীর রামপুরা বাজারের সামনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কম দামে চিনি বিক্রি করছে। কেজিপ্রতি দাম ৫৫ টাকা। একজন ক্রেতা এক কেজি চিনি কিনতে পারছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে সেখানে চিনি কিনতে কয়েকশো মানুষের দীর্ঘ সারি। এক কেজি চিনির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁই দাঁড়িয়ে তারা। কারণ বাজারের চেয়ে অর্ধেক দামে চিনি মিলছে টিসিবির ট্রাকে। চিনি পেতে লাইনে দাঁড়ানো আব্দুস সালাম বলেন, দোকানে এক কেজি চিনি ১১০ টাকা। এখানে ৫৫ টাকা কম। সেজন্য কষ্ট হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সময় কিছুটা বেশি লাগলেও কিছু করার নেই। কষ্ট মেনে নিতে হবে। ৫৫ টাকা সাশ্রয় করতে পারলে বর্তমানে সেটাই আমার জন্য অনেক বড় কিছু।
তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা করেও টিসিবির কার্ড (ফ্যামিলি কার্ড) পাইনি। এখানে কার্ড ছাড়া দিচ্ছে শুনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু শুধু চিনি নয়, এর সঙ্গে যদি তেল দিতো তাহলে খুব ভালো হতো। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের কাছে ভর্তুকি মূল্যে চিনি বিক্রি শুরু করছে সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি। সোমবার (২৪ অক্টোবর) থেকে টিসিবির চিনি কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এজন্য টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড প্রয়োজন হচ্ছে না। টিসিবি চিনি বিক্রি শুরুর দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রামপুরা, মালিবাগ রেলগেট ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মালিবাগ রেলগেট এলাকায় চিনি কিনতে আসা মর্জিনা বেগম বলেন, তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চিনি পেয়েছি। সকাল থেকে বিরাট লাইন। তারপরও মানুষ নিচ্ছে। লাইনে অনেক চা দোকানি রয়েছে। কেউ কেউ একাধিকবার লাইনে দাঁড়াচ্ছে। সেজন্য চাপ খুব বেশি। টিসিবির ডিলাররা জানান, দিনে তাদের দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৭০০ কেজি চিনি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৭০০ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে চিনি কিনতে পারছে।
এদিকে, টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ১১ স্পটে চিনি বিক্রি কার্যক্রম চলছে। ভোক্তা পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে এ চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি বাজার। চিনির দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ পেলেই অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। করা হচ্ছে জরিমানাও। অন্যদিকে সোমবার (২৪ অক্টোবর) একদিনের মধ্যে চিনির বাজার স্থিতিশীল হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেননি চিনি সরবরাহকারীরা। ভোক্তা অধিকারে মতবিনিময় সভায় তারা এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে মঙ্গলবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো অধিকাংশ দোকানে খোলা চিনি নেই। যেখানে মিলেছে সেখানে প্রতি কেজি ১১০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার গ্যাসে রেশনিং করার কারণে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ কমায় চিনির উৎপাদনে ধস নেমেছে। আবার নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার টিসিবির জন্য চিনি সংগ্রহ করছে স্থানীয় বাজার থেকে। এতে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডলার সংকটে আমদানি কম হওয়াকেও দায়ী করছেন উৎপাদনকারীরা। রবিবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত বছরের তুলনায় এ বছর চিনি সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। শিগগির আরও এক লাখ টন চিনি আমদানি করা হবে। দ্রুতই চিনির বাজার স্থিতিশীল হবে।