দুধ-ডিম-আদাসহ নিত্যপণ্যে অস্বস্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ৪ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কিছুতেই নাগালে আসছে না নিত্যপণ্যের দাম। আদা, ডাল, রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়েছে গত এক মাসের ব্যবধানে। কিছু পণ্যের দাম আবার আগে থেকে বেড়ে স্থিতিশীল। সীমাহীন কষ্টে কাটছে নিম্ন আয়ের মানুষের। জীবন চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। দামের বাড়বাড়ন্তে কিছু পরিবার তাদের খাদ্যতালিকা থেকে বেশ আগেই ছাঁটাই করেছেন আমিষের পরিমাণ। এর মধ্যে আবার চোখ রাঙাচ্ছে ডিম-দুধের মতো প্রয়োজনীয় আমিষগুলোর দামও। বাড়তি দামের জন্য ব্যবসায়ীরা দুষছেন আমদানি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধিকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে মিলেছে এ তথ্য।
টিসিবি বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা আদা। বাজারে এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি কেজি আদা যেখানে গত মাসে ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে, সেটা এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আদার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে রসুনও। বাজারে এ পণ্যের দামও বেড়েছে। তবে আমদানি করা রসুনের চেয়ে দাম বেড়েছে দেশি রসুনের। প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে থাকা দেশি রসুন এখন ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদার দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমদানিকারক ও শ্যামবাজার আড়ত মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ জাগো নিউজকে বলেন, ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা লোকসানে আমদানিপণ্য বিক্রি করছেন। এতে সরবরাহ কমছে, দাম কিছুটা বেড়েছে।
তিনি হিসাব দিয়ে বলেন, চীনে প্রতি টন আদার দাম ১ হাজার ১৩০ ডলার। টাকায় যা প্রতি কেজি ১২৬ টাকার বেশি। সেটা পরিবহনসহ খরচ আরও কেজিতে ১২ টাকা। এছাড়া ঘাটতি ও অন্যান্য খরচ মিলে সেটা প্রায় ১৪৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি, যা পাইকারি বাজারে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় গিয়ে দাম আরও কিছুটা বাড়ছে।
এ ব্যবসায়ী বলেন, ডলারের দাম বাড়ার পরেও বেশ কিছু সময় সরবরাহ চাপে বাড়তি দামে আমদানি করা বহু ব্যবসায়ী লোকসান করেছে। এজন্য এখন আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এদিকে গত একমাসের ব্যবধানে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম কোম্পানিভেদে বেড়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৫০ টাকা। এ নিয়ে চলতি বছর চতুর্থ দফায় বেড়েছে গুঁড়া দুধের দাম। এ বছর মার্চ, জুন ও আগস্টে তিন দফা দাম বেড়েছিল এ নিত্যপণ্যের। এমন পরিস্থিতিতে টিসিবি বলছে, মাসের ব্যবধানে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত। তবে বছরের ব্যবধানে এ দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে গত এক মাসে অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগে যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো, সেটা এখন ৭০-৭৫ টাকা। এছাড়া বাজারে গরিবের অন্যতম আমিষের উৎস ডিমের দাম চলতি মাসে আবার বাড়ছে। বড় বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম উঠেছে প্রতি হালি ৪৫ টাকা, যা খুচরা বাজার আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে কিনতে লাগছে হালিতে ৪৭ থেকে ৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও যা ৩৮ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। এ হিসাবে পণ্যটির দাম মাত্র একমাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এছাড়া বাজারে সরু চাল, আটা, ময়দা, চিনি, আলু, লবঙ্গের দাম বেড়েছে গত মাসের তুলনায়। এদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় বেশকিছু পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানির খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এসব বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমিষজাতীয় খাবারের দাম বেশি বাড়াটা ভিন্ন উদ্বেগের। সেটি পুষ্টিহীনতার শঙ্কার কারণ। অন্যান্য পণ্যের দামও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, কিছু পণ্যের দাম যৌক্তিভাবে বেড়েছে বেশকিছু কারণে। তবে সে সুযোগ নিয়ে অন্যান্য পণ্যেরও দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আবার বাস্তবে যতা বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দামে। এছাড়া দেশে কোনো পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ে সেটি পরবর্তী সময়ে সেভাবে সমন্বয় হয় না। দাম কমলেও সেটা বাজারে বাস্তবায়ন করতে চান না কোম্পানি বা বিক্রেতা কেউই।