ঈশ্বরদীতে সারের তীব্র সংকট, বিপাকে কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৯ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
অনাবৃষ্টির কারণে পাবনার ঈশ্বরদীতে আমনের আবাদ শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর। একই সময়ে শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজি চাষও। ধান আর সবজি চাষ একই সময়ে শুরু হওয়ায় বেড়েছে সারের চাহিদা। তবে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না সার। ফলে বিপাকে পড়েছেন ঈশ্বরদীর চাষিরা। তবে সার সংকটের বিষয়টি মানতে নারাজ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। তার দাবি, চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গ্রামে শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি আমন ধানও রোপণ চলছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সার জমিতে দিতে না পারায় ভালো ফলন নিয়ে শংকায় রয়েছে এখানকার কৃষকরা। মুলাডুলি ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, সার সংকটের কারণে ফসলের সুফল ঘরে তুলতে পারব কি না তা নিয়ে শংকিত। কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারদের কাছে ধরনা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছি না। সারের জন্য কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারের কাছে গেলে বলেন, আজ না কাল আসবেন। দুই চারদিন ঘোরার পর সার পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। চাহিদা যদি থাকে ৫০ কেজি, দেয়া হয় ১০ কেজি।
নিকরহাটা গ্রামের আইনুল হক বলেন, সার নিয়ে সবচেয়ে বড় সংকটে রয়েছি। দুই বস্তা (১০০ কেজি) সারের প্রয়োজনে ইউনিয়ন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তার কাছে গেলে সে পাঁচ থেকে ১০ কেজির জন্য সিøপ দেয়। এ সার নিতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে একবেলা কেটে যায়। চকশ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম মুলাডুলি বিসিআইসি সার ডিলারের কাছে এসেছেন সার নিতে। তার অভিযোগ, চাহিদা অনুযায়ী সার পাননি তিনি। তিনি বলেন, ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এ পর্যন্ত এক বস্তা ইউরিয়া ও এক বস্তা পটাশ দিয়েছে ডিলার। ধান গাছের বয়স এক মাস। সার নিতে এলে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা এক বস্তা দিতে চেয়েছে। ১৫ বিঘা জমিতে এক বস্তা সার দিয়ে কী হবে। ডিলারের লোকজন বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী সার দেয়া সম্ভব নয়।
নিকরহাটা গ্রামের কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, ১৬ বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়শ চাষ করেছি। এ ফসলে সারের প্রচুর প্রয়োজন হয়। ডিলারের কাছে গেলে ১০ কেজি অথবা ২০ কেজি সার দেয়। এ সার নিতে গেলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। চাহিদা অনুযায়ী যেহেতু সার পাওয়া যায় না তাই বাধ্য হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে থেকে সরকারি নির্ধারিত দামের দ্বিগুণ মূল্যে সার কিনতে হচ্ছে। ফসল বাঁচাতে এছাড়া আর কিছু করার নেই। মুলাডুলি ইউনিয়নের উপসহকারী কর্মকর্তা রুমানা পারভীন বলেন, সার নিয়ে কৃষকদের অভিযোগের শেষ নেই। এ অভিযোগ থাকবেই। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কৃষকরা আমনের আবাদ দেরিতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে শীতকালীন সবজি চাষও শুরু হয়েছে। ধান ও সবজি দুটির সার একই সঙ্গে দিতে হচ্ছে। আমরা চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছি। তবে সারের কোনো সংকট নেই। মুলাডুলি ইউনিয়নের বিসিআইসির সার ডিলার মেসার্স ইমরান ব্রাদাসের স্বত্বাধিকারী মসলেম উদ্দিন জানান, সরকার যেভাবে বরাদ্দ দিচ্ছে আমরা সেভাবেই বিতরণ করছি। এছাড়া কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তারা সারের দোকানে বসে থেকে কৃষকদের সারের সিøপ দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী সার দেয়া হচ্ছে। কৃষকদের চাহিদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাহিদার বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তারা জানেন। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সিøপ দেখে সার দিচ্ছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীর কোথাও সারের সংকট নেই। কৃষক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সার জমিতে প্রয়োগ করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় চাহিদা বেশি হলে সংকটের অভিযোগ তো করবেই।