কম ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে লাভে বিমান, নাখোশ বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১২ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৭ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বর্তমানে দেশে একটি সরকারি, দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। গত কয়েক মাসে জেট ফুয়েলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় বেশ বিপাকে আছে এয়ারলাইন্সগুলো। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো দফায় দফায় বাড়িয়েছে ভাড়া। তবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একই সময়ে তুলনামূলক বেশ কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে। এতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারিখাতের এয়ারলাইন্স দুটি। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর দাবি, তারা যাত্রী পরিবহনে প্রতিটি ফ্লাইটে বড় অংকের ভর্তুকি দিচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বলছে, বিমান কম টাকায় ভালো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। এটা তাদের বিজনেস পলিসি। এতে বিমানে যাত্রী ও রাজস্ব আয়ও বাড়ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে এখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার যাত্রী পরিবহন করে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সর্বনিম্ন ভাড়া চার হাজার ৮শ টাকা, চট্টগ্রামে তিন হাজার ৭শ টাকা, সিলেটে তিন হাজার ৫শ টাকা, রাজশাহীতে তিন হাজার ৫শ টাকা, সৈয়দপুরে তিন হাজার ৪৯০ টাকা, যশোরে তিন হাজার ১৯৫ টাকা ও বরিশালে তিন হাজার টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। এর মধ্যে কেউ ক্রেডিট কার্ডে টিকিটের টাকা পরিশোধ করলে মিলছে ১০ শতাংশ ভাড়া ছাড়। অন্যদিকে ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ারে কক্সবাজার রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ হাজার ৪৯৯ টাকা, চট্টগ্রামে তিন হাজার ৬৯৯ টাকা, সিলেটে তিন হাজার ৪৯৯ টাকা, সৈয়দপুরে তিন হাজার ৪৯৯ টাকা, যশোরে তিন হাজার ১৯৯ টাকা, রাজশাহী চার হাজার ৪৯৯ টাকা ও বরিশালে তিন হাজার ২শ টাকা। অ্যাপস বা ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট কোড ব্যবহার করে বেজ ফেয়ারে রয়েছে ১০ শতাংশ ছাড়। যাত্রী সংকটের কারণে গত ১ আগস্ট থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রেখেছে নভোএয়ার।
এসব বিষয়ে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিভিন্ন ধরনের ফি ও সারচার্জ বৃদ্ধির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমানের বৈরিতার কারণে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো খুবই চাপে রয়েছে। এখন অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে (প্রতি ফ্লাইটে) আসনপ্রতি দুই হাজার ৬৩০ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। ৮০ আসনের একটি ফ্লাইট পরিচালনায় ক্ষতি দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। জ্বালানির দাম বাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা খরচের ৫০ শতাংশই এখন তেলের পেছনে ঢালতে হয়। জ্বালানি খরচ, অগ্রিম কর মিলিয়ে আমাদের ফ্লাইট পরিচালনায় এখন বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলে অন্য ব্যবসা থেকে টাকা এনে সেই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। কতদিন এভাবে চলতে পারবো তা জানি না।
কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ভাড়া কমানো বিমানের একটি বিজনেস পলিসি। এতে বিমানে যাত্রী সংখ্যা ও রাজস্ব আয় ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু গত ছয় মাসে বিমানের কোন রুটে, কয়টি ফ্লাইটে কত সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছে এবং কত টাকা আয় হয়েছে সে তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
ভাড়া সমন্বয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি: গত ১ জুন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে চিঠি দেয় দেশীয় উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)। একই সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে চিঠি দেয় সংগঠনটি।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের ৮০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ যাত্রীই বহন করছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স, আর বিমান বহন করছে ২০ শতাংশ। কিন্তু বিমান বিভিন্ন রুটের টিকিটের দাম কমিয়ে রাষ্ট্রীয় টাকায় ভর্তুকি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এতে বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো দাঁড়াতে পারছে না। এরই মধ্যে দেশে আটটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া ছিল ২ হাজার ৮৫০ টাকা। জিএমজি এয়ারলাইন্সের ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা। এক সময় যখন দুবাই রুটে জিএমজি এয়ারলাইন্স অধিকসংখ্যক যাত্রী বহন করতো, তখন বিমান তাদের ভাড়া ৪৭৫ মার্কিন ডলার থেকে নামিয়ে ৩৫০ ডলার করে। এর পরপরই জিএমজি তাদের অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এওএবির চিঠির পর গত ২০ জুন দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণে বৈঠকে বসেছিল মন্ত্রণালয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বৈঠকে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে প্রতি বছর এওসি (এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট) নবায়নের সময় বেবিচকের সব ধরনের চার্জ নগদে পরিশোধ করতে হয়। নগদ অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয় তেল। অথচ বিমান বছরের পর বছর বেবিচকের বিভিন্ন চার্জ বাকি রেখে এবং পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে বাকিতে জেট ফুয়েল কিনছে। এ দুই ক্ষেত্রে বিমানের সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর বৈষম্য করা হচ্ছে।