ব্যাংক খাত সংস্কারে সহায়তার প্রস্তাবে বিশ্বব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘না’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪০ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কার চায় বিশ্বব্যাংক। ঢাকায় সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার অর্থমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সংস্কারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সহায়তা করার প্রস্তাব দেয় বিশ্বব্যাংক। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ব্যাংক খাত সংস্কারে আপাতত সহায়তার প্রয়োজন নেই। গত সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকায় সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছেরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ডলার-সংকট ও রিজার্ভ পরিস্থিতি বিশ্বব্যাংকের সামনে তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, ডলারের দাম নির্ধারণ হচ্ছে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। এটি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাজারে ডলারের ঘাটতি থাকায় রিজার্ভ থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ কমে আসছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আমদানি কমছে।
তবে রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে। ফলে ডলারের চাহিদা কমছে। সামনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বৈঠকে সুদহারের সীমা তুলে দেয়া নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে মার্টিন রেইজার নিজের পেজে টুইট করেন। এতে তিনি বৈঠকটিকে ‘গ্রেট’ বলে আখ্যায়িত করেন। এ ছাড়া বৈঠকে টেকসই উন্নয়নের জন্য সংস্কারের তাগিদ দেন। তিনি টুইটে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ধারাবাহিকভাবে সহায়তা দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ৫০ বছর উদ্যাপন করছে।’
বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, তারা আর্থিক খাতের উন্নতিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আর্থিক সূচকে দুর্বল অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা শুরু করেছে। সংস্কার প্রয়োজন এমন ব্যাংকের তালিকায় আছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বিদেশি খাতের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। তবে সম্প্রতি অনিয়ম ধরা পড়েছে, এমন ব্যাংকগুলোকে এই তালিকায় যুক্ত করা হয়নি।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
এদিকে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর এক হোটেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্টিন রেইজার। বৈঠকে বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষত করোনাকালে বাজেট সহায়তা প্রদান ও কোভিড টিকা কেনায় অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রশংসা করে মার্টিন রেইজার বলেন, অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সভায় উভয় পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যে সংস্কার প্রয়োজন
গত সোমবার ঢাকায় এসে ওই দিন রাতেই রাজধানীর একটি হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রতিযোগিতাসক্ষম করতে আর্থিক খাত সংস্কারের তাগিদ দেন।
বৈঠক শেষে মার্টিন রেইজার টুইট করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে নৈশভোজে অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তু হলো ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে এবং বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবিলা করছে। এদেশে বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে আর্থিক খাতে সংস্কার প্রয়োজন। এ ছাড়া সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) ও আঞ্চলিক যোগাযোগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
মার্টিন রেইজার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চান। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এদেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি জ্বালানি খাতে ভর্তুকি সমন্বয়সহ সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা যৌক্তিক করার পরামর্শ দেন।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় এক হোটেলে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করে এদেশে কার্যরত উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এমন এক সময়ে সফরে এসেছেন যখন ডলার–সংকটসহ অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশ ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা চেয়েছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। দেশে বর্তমানে ৫৫টি প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৫৬৯ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।