বাজারে নাভিশ্বাস ঠেকছে বেশিরভাগ মানুষের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৬ পিএম, ২৬ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২৮ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
চাল, আটা ছাড়া বাঙালির প্রতিদিনের খাবারের কথা ভাবাই যায় না; যে কারণে এ দুই প্রধান পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাজারে নাভিশ্বাস ঠেকছে বেশিরভাগের।
তবে সরকারি সংস্থাগুলোর তৎপরতায় গত এক সপ্তাহে ডিম-মুরগি, কাঁচামরিচসহ বেশকিছু পণ্যের দাম কমেছে।
গত ১০ দিনে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা; প্রতিকেজি মোটা ও মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড ৫৭ থেকে ৬০ টাকায়। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইল নামের সরু চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার পর থেকেই চালের দাম দিনকে দিন বেড়েই চলছে। দাম বেড়ে যাওয়ার চাপে বেচাবিক্রিও অনেক কমে গেছে।
রাজধানীর বড়বাগ এলাকার মুদি দোকানি পলাশ আহমেদ বলেন, ‘এখন মোটা চালের মধ্যে বিআর আটাশের চেয়ে পাইজামের দাম বেশি। হিসাবে প্রতিকেজি পাইজাম ৬০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
কিন্তু আমরা এখন ৬০ টাকা করে বিক্রি করছি। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ টাকায়, ভালো মানের সরু চাল ৮০ টাকায়।’
চালের বিকল্প পণ্য আটার দামও ঊর্ধ্বমুখী বলে জানালেন তিনি।
‘দুই কেজি ওজনের প্যাকেট আটা এখন ১১৫ টাকা, খোলা আটা প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে ডিমের দাম আরও কমেছে। এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই ১২০ টাকায়,’ যোগ করেন তিনি।
ওই এলাকার আল রাজ্জাক মুদি দোকানে এদিন বেশ কয়েকজন ক্রেতাকে আধা কেজি আটা ও আধা কেজি ময়দার প্যাকেট নিতে দেখা গেল। অথচ সাধারণ ক্রেতারা এক কেজি করেই চাল-আটা কিনে আসছিলেন। নিত্যপণ্যের দামের উল্লম্ফনে অনেকের যে এখন পেট ভরাই কঠিন ঠেকছে!
দুই বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে পীরেরবাগে ফেরদৌস হাসান নামের এক বিক্রেতাও বিস্ময় প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর প্রাক্কালে ২৮ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি করেছি। দুই বছরের ব্যবধানে এখন সেই চাল বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। এটা ভাবা যায়!
এ পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায় আমাদের দ্বিগুণ চালান লগ্নি করতে হচ্ছে। কিন্তু লাভ আছে ঠিক আগের মতোই। বর্তমানে বেচাবিক্রি একেবারেই কম। চালের দাম শুনে মানুষ ফেরত যাচ্ছে। ১০ কেজি কিনতে এসে ৫ কেজি নিয়ে চলে যাচ্ছে।’
পীরেরবাগে একটি মুদি দোকানে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মোটা চাল কিনতে এসেছিলেন একজন ক্রেতা। ২৭৫০ টাকা দাম শুনে চলে গেলেন।
দোকানি বললেন, ‘সম্ভবত তার হাতে টাকা কিছু কম আছে। তা না হলে ফিরে যেত না।
কারণ আমি যেই দামে চাল দিচ্ছি, এটাই বাজারের সর্বনিম্ন। অন্য কেউ এর চেয়ে কম দামে দিতে পারবে না।’
বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গত জুলাইয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির পথ উন্মুক্ত করার পর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটির বাজারও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সেখান থেকেও আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ সুযোগে দেশে নতুন করে দাম বাড়া শুরু হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে ডিজেলের মূল্য বাড়ানোর পর নতুন করে আবারও বাড়তে থাকে চালের দাম। গত তিন সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে গড়ে ১০ টাকা থকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে বিক্রেতারা বলছেন।
ঢাকায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব অভিযানে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, কেনাবেচার স্বচ্ছ হিসাব না রাখার দায়ে করা হচ্ছে জরিমানা।
এদিকে চলতি সপ্তাহে লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এবং ফার্মের ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে গত দুই সপ্তাহ ধরে এসব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল।
ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল ও যাত্রাবাড়ি এলাকায় সম্প্রতি চালের পাইকারি দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
চলতি সপ্তাহে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১২০ টাকা, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২২০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর সবজির বাজারে চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, বেগুন, কচুমুখী ও অন্যান্য শাকসবজি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজি ২২০ থেকে কমে ১০০ বা ১২০ টাকায় নেমেছে।
বাজারে নতুন করে বেড়েছে শসার দাম। প্রতি কেজি শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা।
গত সপ্তাহে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হলেও কিছু কিছু মুদি দোকানে এখনও পুরনো মূল্যের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিন তেল মূল্য বাড়ানোর ঘোষণার দিনই বেড়ে যায়।
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৯২ টাকা আর খোলা সয়াবিন ১৮৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।