সারের দাম বাড়তি, কৃষকের চোখে অন্ধকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ২২ আগস্ট,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫১ পিএম, ৯ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নেত্রকোনার কৃষকরা। কৃষিনির্ভর এই জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমন ধান চাষাবাদ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা। সার ও তেলের মূল্য কমানো না হলে কৃষিখাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা কৃষি সংশ্লিষ্টদের।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে নেত্রকোনা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৯৬ টন। সরকার ১ আগস্ট থেকে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়েছে। ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে। হঠাৎ করে ইউরিয়া সার ও তেলের মূল্য বাড়ায় চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে নেত্রকোনার কৃষকরা।
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলাধীন বাউসী ইউনিয়নের মৌয়াটি গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। চাষাবাদ এখন অনেকটাই যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও হ্যান্ডট্রলি দিয়ে তা বাড়িতে আনা হচ্ছে। সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি মানে জমি চাষাবাদ, ধানের চারা রোপণ, ধানকাটা এবং তা ঘরে তোলা পর্যন্ত সর্বত্র বাড়তি দামের প্রভাব পড়বে। কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের দুল্লী গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই আমন ধান আবাদ হয়ে গেছে অনেকটা সেচ নির্ভর। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ এবং ট্রাক্টর দিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের রূপচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আনিসুল ইসলাম বলেন, আগে এক কাটা জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করতে যেখানে লাগত ২০০ টাকা। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই জমি চাষ করতে লাগছে সাড়ে ৩০০ টাকা। নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের বামনমোহা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমন ধান চাষাবাদের খরচ বহুগুণ বেড়ে গেছে। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন এনে ধান চাষাবাদ করলে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন খরচ উঠে আসবে কি না- তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, হঠাৎ করে সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের বাড়তি খরচের ধকল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের দিন মজুরি বৃদ্ধিও তাদের ভোগাচ্ছে। এখন সার ও তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কৃষকদের মতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারাও।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী উদ্যোগের কারণে একদিকে কৃষিখাতে যান্ত্রীকরণ হচ্ছে, অপরদিকে কৃষকরা এর নানা সুফল ভোগ করছে। তারপরও সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জেলার কৃষি খাতে এর নেতিবাচক কিছুটা প্রভাব পড়বেই।