ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছে না : দাম বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২২ পিএম, ১০ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৫৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ভরা মৌসুমেও পটুয়াখালীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে প্রথম দিকে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও এখন ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। গত ৫ দিনে জেলেরা গভীর সমুদ্রে জাল ফেলেও কাক্সিক্ষত মাছ না পেয়ে খালি ট্রলার নিয়ে ফিরছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, আবহাওয়াজনিত কারণে এমন হতে পারে। পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার পায়রা ও বিষখালী নদী ইলিশের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব নদীতে জেলেদের জালে ধরা দিচ্ছে না রুপালি ইলিশ। ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে তেঁতুলিয়া, আগুনমুখোসহ উপকূলীয় নদী। হিমশিম খাচ্ছে জেলেরা, দিন কাটছে হতাশায়। সরেজমিনে দেখা যায়, পটুয়াখালী শহরের নিউমার্কেট, হেতালিয়া বাঁধঘাট ও পুরান বাজারে বর্তমানে ছোট সাইজের ইলিশ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের উপস্থিতি কম থাকায় সামুদ্রিক অন্যান্য মাছের দামও বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। পটুয়াখালী শহরের নিউমার্কেট মাছের বাজারে মো. সাইদুর রহমান নামে একজন ক্রেতা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ না থাকায় অন্যান্য মাছের দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া এমনিতেই সব কিছুর দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। ইলিশের মৌসুমে এখন ইলিশের দাম কম থাকার কথা। অথচ বাজারে ইলিশের আমদানি খুবই কম।
নিউ মার্কেটের মাছ বিক্রেতা রাজ্জাক জানান, মাছের সরবরাহ বাজারে একটু কম। জাটকা ইলিশের দাম এখন ২০০-২৫০ টাকায় থাকার কথা অথচ সেই মাছের দাম ৫০০-৬০০ টাকা। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৫০০-১৮০০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে অনেক। এজন্য অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের দাম অনেক বেশি। রাঙ্গাবালী উপজেলার জেলে হালিম সিকদার বলেন, অবরোধ চলাকালীন পাশের দেশগুলো সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে নিয়ে গেছে। আমরা যখন অবরোধ পালন করি, তারা তখন আমাদের সমুদ্র সীমানার ভেতরে প্রবেশ করে মাছ শিকার করে। অবরোধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যখন সমুদ্রে মাছ শিকারে যাই, তখন দেখি তাদের শত শত ট্রলার ইতিমধ্যে সমুদ্র সীমার ভেতর ঢুকে মাছ শিকার করছে। এ কারণে সমুদ্রে মাছ নেই। কী করমু? কীভাবে ধার পরিশোধ করমু? আর বউ-বাচ্চা নিয়ে কী খামু?
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী জানান, সমুদ্রবন্দর এলাকাগুলোতে বর্তমানে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত রয়েছে। নিরাপদ স্থানে থেকে সব ধরনের মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া খারাপ থাকায় জেলেরা সমুদ্রের গভীরে গিয়ে মাছ ধরতে পারছে না। এছাড়া এখনও ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময় যেহেতু সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, সে কারণে হয়তো ইলিশের দামও কিছুটা বেশি। প্রসঙ্গত, পটুয়াখালীতে ৭৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। প্রতি বছর ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৯ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮৬ মেট্রিক টন। আর বাকি ৮৬ হাজার ৫৯৩ মেট্রিক টন মাছ অন্যান্য জেলার মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করে।