রিকশার লাইসেন্স দিয়ে ৩ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫০ পিএম, ৫ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:০৬ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশনে ১০ দিনে গোপনে দেড় হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব লাইসেন্স দিয়ে ৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে করপোরেশনের দুই প্যানেল মেয়রের বিরুদ্ধে। তবে প্যানেল মেয়রের একজন জানান কোনো অনিয়ম হয়নি। বরং লাইসেন্স প্রদানের কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলে জানান ওই প্যানেল মেয়র।
রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গেলে দেখা মিলবে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার দাপট। বিভাগীয় এই নগরীতে অটোরিকশা চলছে প্রায় ৩০ হাজার। তার মধ্যে ৫ হাজার অটোরিকশাসহ এক হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়া আছে। এর মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধের ঘোষণা থাকলেও ১০ দিনে দেড় হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। যার জন্য ৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার শামসুল ইসলাম এবং প্যানেল মেয়র-২ হিসেবে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মাহমুদুর রহমান টিটোর বিরুদ্ধে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হজ করে দেশে ফেরার পর বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। দুদিন ধরে কাউন্সিলরদের জনরোষে পড়ার আশঙ্কায় দুই প্যানেল মেয়র করপোরেশন কার্যালয়ে আসেননি বলে জানা গেছে।
দুই প্যানেল মেয়র কর্তৃক গোপনে অবৈধভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘হজে যাওয়ার সময় দুই প্যানেল মেয়রকে রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কোনো আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হয়নি।’ রংপুর সিটি মেয়র জানান, রংপুরে গরিব অসহায়-সম্বলহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তদবির করলেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মেট্রোপলিটন পুলিশ ও প্রশাসনের অনুরোধের কারণে লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা হজ করতে যাওয়ার আগে প্যানেল মেয়র-১ শামসুল ইসলাম এবং প্যানেল মেয়র-২ মাহমুদুর রহমান টিটুকে করপোরেশনের রুটিন দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়ে যান। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই প্যানেল মেয়র রিকশাপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মাত্র ১০ দিনে এক হাজার ৬৩৪টি ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়েছেন। যেখানে রিকশার লাইসেন্স নিতে সিটি করপোরেশনকে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতে হয় সেখানে লাইসেন্স প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র বলেন, ‘গোপনে রিকশার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে বলে জানতে পেরে মক্কা থেকে ফোন করে লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তাদের লাইসেন্স না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই প্যানেল মেয়র নিজেদের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পরিচয় দিয়ে উল্টো কর্মকর্তাদের ধমক দিয়ে লাইসেন্স দিতে বাধ্য করেছেন।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, দুই প্যানেল মেয়র ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিটি করপোরেশনের তহবিলে লাইসেন্সপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা জমা করে বাকি তিন কোটি টাকারও বেশি অর্থ লুটপাট করেছেন।
এ ব্যাপারে লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তাদের লাইসেন্স দিতে বাধ্য করা হয়েছে, ফলে করণীয় কিছুই ছিল না। একই কথা বলেন লাইসেন্স শাখার অন্য কর্মকর্তারা।
তবে লাইসেন্স প্রদানের কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন অভিযুক্ত প্যানেল মেয়র সামসুল হক ও মাহমুদুর রহমান টিটু।
তাদের দাবি, লাইসেন্স প্রদানে কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি। একটি লাইসেন্সের বিপরীতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
এ ব্যাপারে সুজন মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফকরুল আনাম বেঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, ‘রংপুর যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে, এত অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়া উচিত হয়নি।’
অবৈধভাবে দেয়া লাইসেন্স বাতিল করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
অন্যদিকে সিপিবি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশনে অনেক ধরনের দুর্নীতি আর অনিয়মের কথা আমরা শুনছি। তার মধ্যে তড়িঘড়ি করে দেড় হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’