শর্তের বেড়াজালে সঞ্চয়পত্রবিমুখ গ্রাহকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৫ পিএম, ৫ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪২ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগের নাম সঞ্চয়পত্র। নিরাপদ ও নিশ্চিত মুনাফার কারণে সঞ্চয়পত্র কেনায় মানুষের আগ্রহ থাকে। তবে সরকারের নানা শর্তে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ক্রমেই নিরুৎসাহিত হচ্ছে মানুষ।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়েছে। এছাড়া ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধানও রয়েছে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রসহ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে এক লাখ আট হাজার ৭০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ অর্থের বিপরীতে মূল টাকা ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে মোট বিক্রি ছিল এক লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যা সর্বশেষ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বেশি। এরমধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়।
২০২১-২২ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এ খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছিল সরকার। সেই হিসাবে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেমেছে অর্ধেকেরও নিচে।
সঞ্চয়পত্রে এতদিনে বিনিয়োগ থাকলেও এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন নীপা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বাড়ি ভাড়ার টাকা জমিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু মুনাফা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নানান শর্ত। এত কিছু বুঝি না। তাই বিক্রি করে দিচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে কথা হয় রতন দেবনাথের সাথে। তিনি বলেন, ‘মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগ ছিল সঞ্চয়পত্র। এখন সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে সরকার নিরুৎসাহিত (শর্তারোপ) করছে। আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে বলছে। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে হিসাব খুলতেও রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এত কীভাবে বুঝবো?’
একই অভিযোগ গণমাধ্যমকর্মী জয়নাল আবেদিনের। তিনি বলেন, ‘মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। অনেকেই পুঁজি খুঁইয়েছেন। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগেও মুনাফা কমানো হয়েছে। অথচ কর্মহীন মানুষের আয়ের জায়গা এটা। এখন নানান শর্ত থাকায় বিক্রি কমছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ অথবা পোস্টাল সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খুলতে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হচ্ছে। অর্থাৎ ক্রেতার আয়করযোগ্য আয়ের সীমায় আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। একইভাবে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে ক্রেডিট ব্যালান্স ১০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে ব্যাংককে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ আবেদনে বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রেও প্রমাণাদি দিতে হবে।’
দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। সেগুলো হলো- পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র। এর বাইরে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে বিনিয়োগ সুবিধা রয়েছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদের ২ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, এজন্য বিক্রি কমাতে এটা করা হয়েছে।