অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন
পোশাক শ্রমিকদের আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৯ পিএম, ৫ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১৪ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বাগেরহাটের শরণখোলার শতাধিক পোশাক শ্রমিকের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি ভুয়া মাল্টিপারপাস কোম্পানির বিরুদ্ধে। অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ‘রূপসা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামের ওই কোম্পানির আট কর্মকর্তা-কর্মচারী এই বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন।
প্রতারণার শিকার ২১ জন পোশাক শ্রমিক নারী-পুরুষ গত বুধবার শরণখোলা প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন। এর আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা কোম্পানির প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর বেপারীর শরণখোলার উত্তর কদমতলা গ্রামের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন।
তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে প্রতারণার টাকায় নির্মিত ওই বাড়ি তাঁদের বলে দাবি করেন। ভুক্তভোগী সবাই চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক।
ওই কোম্পানিতে জমা রাখলে শতকরা ২০ টাকা লাভ দেয়ার আশ্বাসে অনেকে টাকা জমা রাখেন সেখানে। একসময় গ্রাহকরা জানতে পারেন কোম্পানিটি ভুয়া। পরে তাঁরা জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে অফিসে গেলে কর্মকর্তারা গড়িমসি শুরু করেন। এরপর হঠাৎই গা-ঢাকা দেন। এখন তাঁদের অনেকের ফোন বন্ধ, কেউ কেউ ফোন ধরেন না।
গত ১৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে লিগ্যাল নোটিশও পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কে এম আল-আমিনের মাধ্যমে তাঁদের নিজ নিজ বাড়ির ঠিকানায় এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশে ২১ জন ভুক্তভোগী পোশাক শ্রমিকের মোট ৫৮ লাখ ৮১ হাজার ৪৮০ টাকা পাওনা উল্লেখ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, তাঁরা ২১ জনসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত বাগেরহাটের শরণখোলার শতাধিক শ্রমিকের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্র।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রতারকচক্রটি এই প্রতিষ্ঠান খোলে। চট্টগ্রামের সিইপিজেড মোড়ের চৌধুরী মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে তারা। তারা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের লক্ষ্য করেই এই প্রতারণার ফাঁদ পাতে। অধিক লাভের আশায় অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি, এককালীন আমানত, এফডিআর, ডিপিএসসহ বিভিন্ন প্যাকেজে জমা রাখেন তাঁদের সঞ্চিত অর্থ।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে মজিবুর রহমান। বাকি সাতটি পদের মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের বাবুল খানের ছেলে নাঈম খান ইউনিট ম্যানেজার এবং তাঁর ভগ্নিপতি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তেঁতুলবাড়ী বাজারের হাকিম বেপারীর ছেলে মো. আলমগীর বেপারী হলেন প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত অভিযোগকারী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন আকন জানান, কম্পানির কর্মকর্তা আলমগীর বেপারী প্রতারণার টাকা দিয়ে শরণখোলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামে তাঁর স্ত্রী পারভীন আক্তারের নামে পাঁচ কাঠা জমি কিনে সেখানে দোতলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। জমিসহ তাঁর এই বাড়ির মূল্যই প্রায় কোটি টাকা। এ ছাড়া ইউনিট ম্যানেজার নাঈম খানও দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। তাঁরা উভয়েই এখন আত্মগোপনে।
পোশাক শ্রমিক রিমা বেগমের কাছ থেকে তিন লাখ ৭৫ হাজার, পারভীন আক্তারের তিন লাখ ১১ হাজার, মজিবর রহমান হাওলাদারের ছয় লাখ ৭০ হাজার, আবদুর রহিমের দুই লাখ ৩২ হাজার, নাজরিন বেগমের পাঁচ লাখ ২০ হাজার, ফোরকান হোসেনের ছয় লাখ, ডলি বেগমের দুই লাখ তিন হাজার, দেলোয়ার হোসেনের চার লাখ ৬০ হাজার টাকাসহ শতাধিক পোশাক শ্রমিকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করবেন বলেও জানান ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য রূপসা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান এবং প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা আলমগীর বেপারীর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাঁদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।