রেকর্ড পরিমাণ বিক্রির পরও নিয়ন্ত্রণহীন ডলারের বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৬ পিএম, ৩ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:২৩ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আমদানি চাপ ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে মার্কিন ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে দাম। কমছে টাকার মান। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরেও বিক্রি অব্যাহত। তারপরও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে আমদানি ব্যয় পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে। তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) ১১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সব মিয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম ৩৩ দিনে (২ আগস্ট পর্যন্ত) ১২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিক ডলার বিক্রির কারণে দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
ডলারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে রফতানির থেকে আমদানি বেশি হয়। ৮০ বিলিয়ন ডলার আমদানির বিপরীতে রফতানি ৫০ বিলিয়ন। এছাড়া রেমিট্যান্স থেকে ২০ বিলিয়ন আসে। বাকি ১০ বিলিয়নের মধ্যে কিছু বিদেশি ঋণ দিয়ে পূরণ করা হয়। কিন্তু ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের একটা গ্যাপ থেকে যায়। এসব কারণে আমদানি ব্যয় কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে আমদানির হার কমে এসেছে। নান শর্ত দিয়ে আমদানি নিরুৎসাহিত করার সুফল আসতে শুরু করেছে। চলতি বছরের জুন থেকে জুলাই মাসে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমেছে ৩১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গেল জুলাই মাসে দেশে মোট ৫৪৭ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা জুন মাসের তুলনায় ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। জুন মাসে আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলারের। তবে জুন মাসে অবশ্য মে মাসের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র ৭ শতাংশ বেশি খোলা হয়েছিল। মে মাসে ঋণপত্র খোলা হয় ৭৪৪ কোটি ডলারের।
এপ্রিল থেকে আমদানি কমতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে মার্চের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। মে মাসেও এপ্রিলের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। ডলারের বাজার স্থিতিশীলের আভাস দিয়ে মুখপাত্র বলেন, ডলার সংকটের কারণে আমরা আমদানিতে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছি। এখন ৩ মিলিয়নের (৩০ লাখ ডলার) বেশি আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। আগে যেটা ছিল ৫ মিলিয়ন। এতে দেখা যাচ্ছে অনেক এলসি অপ্রয়োজনীয় ও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আমরা এগুলোর অনুমতি দিইনি। ফলে গত জুনের তুলনায় জুলাইয়ে আমদানি এলসি অনেক কমেছে। এছাড়া রেমিট্যান্স ও রফতানি বেড়েছে। এসব দিক বিবেচনা করলে আমরা বলতে পারি, ডলারের সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে ও বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে।
তিনি বলেন, বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে এগুলো বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আশা করছি এটা অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ৭৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। গত মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। তবে খোলাবাজার থেকে এক ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকগুলোতে এখন আমদানির জন্য ১০০ টাকার নিচে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায় ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। রেমিট্যান্সের জন্যও ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। মঙ্গলবার খোলাবাজারে ১০৯ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশে খোলাবাজারে প্রথমবারের মতো ১০০ টাকার ঘর পেরিয়ে যায় গত ১৭ মে। এরপর আবার কমে আসে। পরে গত ১৭ জুলাই ফের ১০০ টাকা অতিক্রম করে। গত সপ্তাহে নগদ ডলার ১১২ টাকায় উঠেছিল।