৭২ ঘণ্টা গ্যাসবিহীন সরাইল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৩ পিএম, ১ আগস্ট,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২৬ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গ্যাস পাইপলাইনে হুক-আপ/কমিশনিং কাজের জন্য গত ৩১ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ৩রা আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত গ্যাসবিহীন থাকবে সরাইল। ইতিমধ্যে চলে গেছে ৪৮ ঘণ্টা। সুযোগে কদর বেড়েছে মাটির চুলার। বিক্রি বেড়েছে রাইস কুকার ও ইন্ডাকশনের। হোটেলে লোকজনের ভিড়। হোটেল থেকে ক্রয় করে খাবার খাচ্ছেন সরাইলের ইউএনও। ডাবল হয়ে গেছে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া। সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলোও। চারদিকে হ্যাঁ হুঁতাশ।
সূত্র জানায়, মহাসড়কে ফোরলেন সম্প্রসারণের কাজ চলমান থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে প্রায় সময় গ্যাস লাইনে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘাটুরা হতে পুনিয়াউট নতুন বাইপাস পর্যন্ত ৬ ইঞ্চি, ৪ ইঞ্চি, ৩ ইঞ্চি, ২ ইঞ্চি, ১ ইঞ্চি ও ৩/৪ ইঞ্চি ব্যাস ৪ বার চাপের গ্যাস পাইপলাইনে হুক-আপ/ কমিশনিং কাজের জন্য সরাইলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্রাহকদের অবগতির জন্য যথা সময়ে বিষয়টি প্রচার করেছেন কর্তৃপক্ষ। গ্যাস না থাকার খবরে সরাইলের হাজার হাজার গ্রাহকদের টেনশন বেড়ে যায়। কারণ গত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে সরাইল সদরের গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দে গ্যাস ব্যবহার করে আসছেন। বাড়ি থেকে বিদায় করে দিয়েছেন মাটির চুলা ও লাকড়ির গাছ। গত ২৫ জুলাই থেকে সরাইলের লোকজন চুলার সন্ধানে চারদিকে ছুটাছুটি শুরু করেন। যাদের সুবিধা আছে তারা বাড়িতে নিজ হাতে আবার চুলা তৈরি করছেন। লাকড়ির সন্ধানে এদিক ওদিক ছুটছেন। কেউ দৌড়াচ্ছেন সিলিন্ডারের পেছনে। ক্রোকারিজের দোকানগুলোতে বিক্রি বাড়ছে রাইস কুকার ও ইন্ডাকশনের।
সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিকল্প হিসেবে লাকড়ির পাকে সামাল দিচ্ছেন রোগীদের খাবার। প্রত্যেক বাড়িতে গ্যাসের বিকল্প ব্যবস্থায় ব্যস্ত লোকজন। কেউ এক মুখো চুলায় ছাদের উপর লাকড়ি দিয়ে পাক করছেন। অনেকে বাড়ির সিঁড়ির নিচে রান্নায় ব্যস্ত। তারপরও সকাল ৬টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত হোটেল গুলোতে নাস্তা ক্রয়ের জন্য থাকে মানুষের ভিড়। পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ বিক্রি বেড়েছে হোটেল মালিকদের। কনফেকশনারী গুলোতে পূর্বের তুলনায় অধিক পরিমাণ ব্রেড আমদানীর পরও স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুদির দোকানে তিনগুণ বেড়ে গেছে চিড়া ও গুড় বিক্রি। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্তত ৩ দিনের জন্য চলে গেছেন শ্বশুরবাড়ি/ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। গ্যাস সমস্যার কারণে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন এখানকার সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো। সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধিক ভাড়া গুণছেন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাগুলোও। স্বল্প আয়ের মানুষ গুলোর নাভিশ্বাস ওঠছে। গ্যাস না থাকায় চারদিকে মানুষের হ্যাঁ হুঁতাশ।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক কামাল মিয়া বলেন, আমরা রাত জেগে মাধবপুর থেকে গাড়িতে গ্যাস নিয়েছি। সরাইলের চালকরা সেখান থেকেই গ্যাস নিচ্ছেন। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া বলেন, রোগীদের খাবার পাকের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেছি। বছর দুই আগে গ্যাস সমস্যায় বাসার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার ক্রয় করেছিলাম। বিপদে সেটি এখন কাজে লাগছে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, তিন দিন গ্যাস থাকবে না। এমন ঘোষণায় পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়েছি ঢাকায়। আর আমি হোটেল থেকে খাবার ক্রয় করে খাচ্ছি।