চট্টগ্রামে খাল খনন
৮ বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্প : ব্যয় বেড়েছে পাঁচ গুণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩০ পিএম, ২৯ জুলাই,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
চট্টগ্রাম মহানগরীতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ডুবছে নগরীর অধিকাংশ এলাকা। পানি ঢুকছে বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা এখন নগরীর ৭০ লাখ মানুষের দুঃখ হয়ে উঠেছে।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একটি প্রকল্প রয়েছে।
বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্পে গত আট বছরে ব্যয় বেড়েছে পাঁচ গুণ। অথচ কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে সময়। ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার এ খাল খনন প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
চসিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ১৯৯৫ সালে করা ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত দুই দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে খালটি খননের সুপারিশ করা হয়। ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনাটি (ডিপিপি) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চসিক। এর প্রায় আড়াই বছর পর ২০১৪ সালের ২৪ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। তবে ওই সময়ের মধ্যে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় এ প্রকল্পের কাজ থমকে যায়।
এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করে আবারও অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এ সময় এক লাফে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয় এক হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। গত ১৯ এপ্রিল সবশেষ সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে প্রকল্প ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে প্রায় ২৫ দশমিক ২৩৫ একর জমি অধিগ্রহণে। এই প্রকল্পে ৯১১ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণ খাতে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ খাতে জমা দিয়েছে চসিক। প্রকল্পের চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর নগরের মাইজপাড়ায় চসিকের বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
প্রকল্প পরিচালক চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম বলেন, ‘এখন দুই পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। গাইড ওয়াল হয়ে গেলে মাটি কাটা হবে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের ধীর গতি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি হবে ৬৫ ফুট চওড়া। খালের দুই পাশে ২০ ফুট করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রাস্তা হবে এবং ছয় ফুট প্রস্থের দুটি করে ওয়াকওয়ে হবে। বারইপাড়া হাইজ্জারপুল থেকে শুরু হয়ে খালটি নূর নগর হাউজিং, ওয়াইজের পাড়া, বলিরহাটের বলি মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশবে।’
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন, ‘নগরীতে নতুন করে খাল খননের প্রয়োজন নেই। ১৯৬৮ সালের সিডিএ কর্তৃক গৃহীত বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ম্যাপে ৭১টি খাল রয়েছে। ওই ম্যাপে এসব খালের দৈর্ঘ্য-প্রস্থও রয়েছে। আর এস খতিয়ান অনিযায়ী এসব খাল উদ্ধার করলে চট্টগ্রামে নতুন করে খাল খননের প্রয়োজন হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে নতুন খাল খনন মানেই অর্থের অপচয়। ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ খাল খনন করার পরও জলাবদ্ধতা কমবে বলে মনে হয় না।’
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত কাজের মেয়াদ আছে। আমাদের টার্গেট আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা। খাল খনন প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে নগরীর বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, মুরাদপুরসহ বেশকিছু এলাকা জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাল খনন প্রকল্পে ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য পাঁচটি এলএ মামলায় (ভূমি অধিগ্রহণ মামলা) ভাগ করা হয়। যার মধ্যে তিনটি মামলায় ভূমি অধিগ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত হয়। বাকি দুটি এলএ মামলা চলমান আছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ১৫ শতাংশ ভৌতকাজ সম্পন্ন হয়েছে।’