সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় শুধু সুদই বাড়লো ৩০ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৭ পিএম, ২৬ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২৫ এএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
৩১৯ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনসহ বিদ্যুৎ সরবরাহে বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণে নেয়া হয় পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৬২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাকি টাকার উৎস সরকারি কোষাগার। নানান কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটি কয়েক দফায় সংশোধন করা হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় আড়াই বছর পর। এ কারণে শুধু নির্মাণকালীন সুদ বাবদ খরচ বেড়েছে ৩০ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি প্রকল্পের কাজ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের কিছু খাতে ব্যয় বেড়েছে আবার কিছু খাতে ব্যয় কমানোও হয়েছে। এসব কারণেই মূলত প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। জানুয়ারি ২০১৬ থেকে প্রকল্পটি শেষ হয় জুন ২০২২ মেয়াদে। সরকার ও জার্মান সরকারের পক্ষে জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (কেএফডাব্লিউ) প্রকল্পে অর্থায়ন করে। তারা আরও জানান, প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ১৮৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পে কেএফডাব্লিউ অর্থায়ন করে ৫৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাকি টাকাও সরকারি কোষাগার থেকে ঋণ হিসেবে নেয় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)।
প্রকল্পটি সংশোধনের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, সরকার ও কেএফডাব্লিউ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পিজিসিবি। প্রকল্পের মেয়াদ আড়াই বছর বাড়ার কারণে ৩০ কোটি টাকা বাড়তি সুদ দিতে হবে পিজিসিবিকে। এটা নির্মাণকালীন সুদ। ২০ বছরে সুদ পরিশোধ করতে হবে। তবে পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী পরামর্শক ব্যয় নির্ধারিত ছিল ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। টেন্ডার ডকুমেন্ট ও ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি সম্পাদনের জন্য এবং মেয়াদ বাড়ার কারণে সুপারভিশন কনসালটেন্সি বাবদ এ খাতে মোট ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ে। আবার ইলেক্ট্রিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট, অন্যান্য ভবন (অনাবাসিক), ট্যাক্স, কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক খাতে চূড়ান্ত চুক্তিমূল্য অনুযায়ী ব্যয় বাড়ানো হয়।
এছাড়া মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তন, ক্ষতিপূরণ, টেস্টিং ফি, সার্ভে, ইনস্যুরেন্স, ইনস্টলেশন, ভূমি উন্নয়ন, পরিবহন, টুলস-প্ল্যান্টস, স্পেয়ার্স, ভ্রমণ, জ্বালানি, অফিস ফার্নিচার, অফিস সরঞ্জাম, হায়ারিং চার্জ, বিবিধ ব্যয়, প্রাইস কনটিনজেন্সি, ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি এবং কাস্টম শুল্ক খাতেও ব্যয় কমেছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে বিনিময় হার ১ ইউরো সমান ছিল ৯৭ টাকা ৫১ পয়সা। দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পের শুরু থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত প্রকৃত পরিশোধিত বিল এবং ভবিষ্যৎ বিলের জন্য সম্ভাব্য বিনিময় হার ছিল ১০০ টাকা। এখন আবার ১ ইউরো সমান ৯৬ দশমিক ৯৭ টাকা। ফলে এ খাতে টাকা সাশ্রয় হয়েছে ৩ কোটি ১৯ লাখ। পিজিসিবি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর একনেক সভায় ১ হাজার ৪২৩ কোটি ৮৯ টাকা ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীসময়ে ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে ১ হাজার ১৮৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা করা হয়। কোডিড-১৯ এর কারণে ১৯ মে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত এনইসি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে জুন ২০২১ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এরপর আবারও প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের আওতায় ৩১৯ দশমিক ২৭৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, নতুন ১৩২ কেভি ১১৩ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, সাতটি ভূমি অধিগ্রহণ, পাঁচটি নতুন গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং আটটি বে-এক্সটেনশন কাজ করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি শতভাগ।