রিজার্ভ ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৮ পিএম, ২৫ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:১৩ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসায় আমদানি বেড়েছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হবে মহামারিতে স্থগিত হওয়া আমদানি ব্যয়ের দেনা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণের চলমান কিস্তির পাশাপাশি স্থগিত হওয়া কিস্তির চাপও বাড়বে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরজুড়েই বেশ চাপের মধ্যে থাকবে রিজার্ভ। যা ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি অর্থবছর রিজার্ভে চাপ থাকবে ঠিকই কিন্তু এই সময়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহও বাড়তে পারে। আর আমদানি ব্যয়ও কমে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিও কমবে। এতে চলতি অর্থবছরের শেষার্ধে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। তখন প্রতি মাসে আমদানি ব্যয় হতো ৫৫০ কোটি ডলারের মতো। আর এ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমদানি মেটানো সম্ভব ছিল। তবে গত অর্থবছরের শেষের দিকে রিজার্ভ নেমে আসে ৪২ বিলিয়ন ডলারে। আর এ সময়ে প্রতি মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭৫০ কোটি ডলারের বেশি। যা দিয়ে সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল। চলতি অর্থবছরের শুরুতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) দেনা পরিশোধ করার পর রিজার্ভ কমে ৪ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যা এখন আর ওপরে উঠছে না। প্রতিদিন আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দিন দিন কমে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রিজার্ভ কমে ৩ হাজার ৯৬৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, চলতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। ফলে চলতি মাস শেষে রিজার্ভ আবার ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এক মত পোষণ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লে রিজার্ভও বাড়বে। সরকার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক নিরাপদ মানদন্ড অনুযায়ী স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। যদি খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয় তাহলে থাকতে হবে কমপক্ষে ৫ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। বিশ্বব্যাপী অপরিহার্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা থাকলে কমপক্ষে ৭ মাসের সমান আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ থাকতে হয়।
বাংলাদেশ বর্তমানে ব্যাপক পরিমাণে খাদ্য আমদানি করে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ে বড় ঘাটতি বিরাজ করছে। যা প্রতি মাসেই বাড়ছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও এখন সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান থাকা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আমদানি ব্যয় নির্ভর করে পণ্যের আমদানির পরিমাণও আন্তর্জাতিক বাজারের দামের ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ায় ২০২০ সালে প্রতি মাসে গড়ে আমদানি ব্যয় হতো ৩৫০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে তা বেড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার হয়েছে। আর চলতি বছর তা আরও বেড়ে ৭৫০ কোটি থেকে ৭৯০ কোটি ডলারে উঠেছে। এতে তিন মাসের বা ৭ মাসের আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ রাখার পরিমাণও বেড়েছে। বর্তমানে আমদানি ব্যয়ের ধারায় গড়ে ৭ মাসের জন্য ৫ হাজার কোটি ডলারের ওপরে রিজার্ভ থাকা উচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতিদিনই ৭ থেকে ১০ কোটি ডলার করে বিক্রি করা হচ্ছে। এরপরও বাজারে অনেক ডলার সংকট রয়েছে। এতে বোঝা যায় আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়েই এখন রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো নিয়মিত এলসি খুলতেও পারছে না। এ অবস্থায় রেমিট্যান্স বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। রফতানি আয় বাড়ানো এখন চ্যালেঞ্জিং। কেননা রফতানির বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা এখন মন্দায় আক্রান্ত। ফলে ওইসব দেশে রফতানি কমে যাবে। এদিকে আমদানি বেড়েই যাচ্ছে। এটি কমানো কঠিন। বেশি কমানো হলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর।
সালেহ আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান সংকট মোকাবিলায় মুদ্রা পাচার ও রেমিট্যান্সে হুন্ডি বন্ধ করাটা জরুরি। এছাড়া বৈদেশিক সংস্থাগুলো থেকে কম সুদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি ঋণের কারণে সামনে আরও চাপ বাড়বে রিজার্ভে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৩৪ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ১৯ শতাংশ বেশি। সে বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধির এই রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বড় সহায়তা করেছে।
চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে প্রধান ক্রেতা ইউরোপ ও আমেরিকা। দুটি অঞ্চলই এখন অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৪০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারও কমছে। এ কারণে রফতানি কমতে পারে। আমদানি ব্যয় সাড়ে ১৪ শতাংশে সীমিত থাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বছর শেষে তা বেড়ে প্রায় ৪৮ শতাংশ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে। করোনাকালে যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত থাকায় পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন কম হয়েছে। করোনার প্রকোপ কমার পর অর্থনৈতিক কর্মকা- যখন বাড়ছিল তখন পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়। বিপরীতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ছিল খুবই কম। যে কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে অতিমাত্রায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘মানুষ শুধু শুধু ভয় পাচ্ছে। এই সুযোগে আবার অনেকে ইচ্ছা করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আমি মনে করি বর্তমানে দেশে যে রিজার্ভ আছে তা যথেষ্ট ভালো; সন্তোষজনক। এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। রিজার্ভ যতক্ষণ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে আছে, ততক্ষণ ভয় পাবার কিছুই নেই। এর নিচে গেলে তখন ভাবা যাবে।
সরকার ব্যয় সংকোচনের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদেক্ষেপে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অনেক পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। আমার বিশ্বাস, এ সব কিছুর ইতিবাচক ফল খুব শিগিগিরই পাওয়া যাবে। আর এ সংকট খুব শিগগিরই কেটে যাবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। তবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগ অংশ জ্বালানি তেল ক্রয়েই ব্যয় হয়। আমাদের বর্তমান রিজার্ভ যা আছে তা দ্রুতই কমতে থাকবে। এর বিপরীতে সরকারি যেসব পদক্ষেপ তা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। মূল সমস্যা আমদানি নির্ভর হয়ে যাওয়া উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যা আমদানি নির্ভর হওয়া। সরকার উৎপাদনমুখী হয়নি। রিজার্ভ কমার যে পরিস্থিতি চলছে, সেটা আরও কমবে। যে মূল্যস্ফীতি এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা আরও বাড়তে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্করণ, রাজস্ব আহরণ ও ঋণখেলাপির দিকে আরও নজর দিতে হবে সরকারকে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংকট স্বল্পমেয়াদি নয়। এটা মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটের দিকে যাবে। কার্যকরী পদক্ষেপ খুঁজে বের করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা, বর্ধিত রাজস্ব উৎপাদন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচি বৃদ্ধি করা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রার আড়াই গুণ বেশি। চলতি অর্থবছরে আমদানির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমদানি ব্যয় এর চেয়ে বেশি হবে। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম কমবে না। গত শুক্রবার রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যসশ্য রপ্তানির বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। যার ফলে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু চালের দাম কমছে না। কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেন চাল রফতানি করে খুবই কম।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বাংলাদেশে ওই চুক্তির তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে বিষয়টি ইতিবাচক। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ শতাংশ। কিন্তু ওই লক্ষ্যমাত্রা তো অর্জিত হয়নি। উলটো কমেছে ১৫ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, প্রণোদনা বাড়ানো, বিনিময় হারে বাড়তি দাম পাওয়া ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করায় এ খাতে প্রবাহ বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫৭ কোটি ডলার। কিন্তু অর্থবছর শেষে ঘাটতি হয়েছে ১৮০০ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫৪৩ কোটি ডলার বেশি।
মূলত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বাড়ায় এ খাতে ঘাটতি বেশি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে এ ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬৫৫ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৪৫ কোটি ডলার কম। এর মানে হচ্ছে, চলতি অর্থবছরেও আমদানি রপ্তানির ব্যবধান বাড়বে। অর্থাৎ রফতানি কমবে। বিপরীতে আমদানি বাড়বে। গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬০৭ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ২৭৫৭ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরে এ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৬০৭ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরেও রফতানি আয় ও আমদানি ব্যয়ের মধ্যকার ব্যবধান বেশি থাকবে। অব্যাহতভাবে চলতি হিসাবে ঘাটতি ও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়া ভালো লক্ষণ নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলছেন, এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমতেই থাকবে। বিপরীতে ব্যয় বাড়তেই থাকে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপও বাড়বে। এ ধারা চলতে থাকলে তা এক সময়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার বিষয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে। প্রতিবেদনে আশার কথা হিসাবে উল্লেখ করা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার সার্বিক আয় ও ব্যয়ের যে ঘাটতি এখন আছে, তা চলতি অর্থবছর শেষে কমে আসবে। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছ, সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬১২ কোটি ৮ লাখ টাকা। ২০২০-২০২১ শেষে অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে অবলোপন মন্দ ঋণের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপের কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘ডলার মজুদ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য চাহিদার উপর ভিত্তি করে এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডলারের যোগান বাড়াতে পারলে কোন সংকটের আশঙ্কাই থাকে না। এর জন্য রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রফতানি আয় বাড়াতে হবে।’ রফতানি আয় বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছতে বেশি সময় লাগবে না। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর রিজার্ভ : চলতি মাসে দেড় বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭.৫ বিলিয়ন ডলার কমে ৫৭২.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে শীর্ষস্থানে থাকা চীনের রিজার্ভ গত সাত মাসে ২০০ বিলিয়ন ডলার কমে ৩ হাজার ২৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ হাজার ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে জাপানের রিজার্ভ ১০০ বিলিয়ন ডলার কমে ১ হাজার ৪০০ বিলিয়ন থেকে ১ হাজার ৩০০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তৃতীয় স্থানে থাকা সুইজারল্যান্ডের রিজার্ভ ৯৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৮৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। শ্রীলঙ্কার পরে রিজার্ভ নিয়ে সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় আছে এখন পাকিস্তান। বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে আসার পরেও, বর্তমানে পাকিস্তানের রিজার্ভ বাংলাদেশের তুলনায় আড়াইগুণ কম। পাকিস্তানের রিজার্ভ নেমে গেছে ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে।