গ্যাস সংকট : সরকারি সিইউএফএলে সার উৎপাদন বন্ধ, চালু রয়েছে বহুজাতিক কাফকো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৬ পিএম, ২৫ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:০৫ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
গ্যাস সংকটে পড়ে চট্টগ্রামের পুরোনো সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (সিইউএফএল) উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে একই এলাকায় থাকা বহুজাতিক কোম্পানির সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (কাফকো) গ্যাস সরবরাহ এবং উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। পেট্রোবাংলার পরামর্শে গত ১৯ জুলাই রাত থেকে সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সিইউএফএলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
কেজিডিসিএলের একটি সূত্র জানিয়েছে, সার উৎপাদনে কাফকোর চেয়ে সিইউএফএলে এক তৃতীয়াংশ বেশি গ্যাস লাগে। সরকারি প্রতিষ্ঠানটির অদক্ষতায় তুলনামূলক অপচয় হয় গ্যাসের। এ কারণে কম গ্যাসে বেশি সার উৎপাদনের জন্য কাফকোতে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৭টি সার কারখানার মধ্যে তিনটিতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, সিইউএফএলে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। সর্বশেষ ২৪ জুলাই সিইউএফএল ছাড়া দেশের আরও তিনটি সরকারি সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (জেএফসিএল) ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট, ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডে (ইউএফএফএল) ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডে (পিইউএফএফএল) দৈনিক ১৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ইউএফএফএল এবং পিইউএফএফএলে দীর্ঘদিন ধরেই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
এদিকে কাফকোসহ যে তিনটি কারখানায় সার উৎপাদন হচ্ছে তার মধ্যে কাফকোতে দৈনিক ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিচ্ছে কেজিডিসিএল। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সিলেট শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (এসএফসিএল) ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদা থাকলেও দৈনিক দেয়া হচ্ছে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট।
সিইউএফএল সূত্রে জানা গেছে, ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়ার পৃথক দুটি প্লান্টে সক্ষমতা অনুযায়ী পূর্ণ উৎপাদনে যেতে দৈনিক ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। শুধুমাত্র ইউরিয়া প্লান্টে চালু করতেই বাধ্যতামূলতভাবে ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে প্লান্টে ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। চালু থাকলে কারখানাটিতে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৭শ টন সার উৎপাদন হয়। এর আগেও মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হয় সিইউএফএল।
এ বিষয়ে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গত ১৯ জুলাই রাত থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস। এতে ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি ২৭-২৮ জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে আবারো প্লান্ট চালু করতে সক্ষম হবো। উৎপাদন বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই লোকসান গুণতে হয়।
কাফকোতে গ্যাস চালু রাখার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী গ্যাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুই কারখানার ইফিসিয়েন্সি দুই রকম। কাফকো এখনো দেশের নাম্বার ওয়ান সার কারখানা। এক টন ইউরিয়া উৎপাদনে সিইউএফএলে প্রায় ৩৪-৩৫ হাজার ঘন মিটার গ্যাসের প্রয়োজন পড়ে। সেখানে কাফকোতে এক টন ইউরিয়া উৎপাদনে গ্যাসের প্রয়োজন হয় ২৪ হাজার ঘন মিটার। ইউরিয়া উৎপাদনে এক তৃতীয়াংশ বেশি গ্যাস ব্যবহার করে সিইউএফএল। সংকটের কারণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সিইউএফএল বন্ধ রেখে কাফকোতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।