ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ৫ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১২:২১ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। বছর বছর বেড়েই চলেছে এই ঋণ।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় ৩০টি করপোরেশনের মধ্যে ২৪টির কাছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে- ৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ৮৯৭৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঋণ নেওয়ায় এ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ আছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর ৮০৫৬ কোটি টাকা।
এসব ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশই খেলাপি। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) ১২টি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪ কোটি টাকায়।
জানা গেছে, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে ব্যাংকের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের সংস্থাগুলোর লোকসান বেড়ে যাওয়ায় তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ খাতে এত বেশি লোকসান না দিলে টাকাগুলো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা যেত।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, গত দুই বছরে ব্যাংকগুলোর পাওনা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ১১১ কোটি টাকা।
সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৭ হাজার ৪৭৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এই ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে পাওনা ১ হাজার ৪৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ব্যাংকগুলো পাবে ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান বিবিসির কাছে ৫ হাজার ২৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ খাতের অপর প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসির কাছে ৫৮৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে (সিপিএ) ৪৬৬ কোটি টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ৩৪২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৮৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
ঢাকা ওয়াসার কাছে পাওনা রয়েছে ১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ৫৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ২০০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৯৭ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে বিজেএমসির কাছে ৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিএডিসির কাছে ২১ কোটি ২৭ লাখ, বিটিএমসির কাছে ২০ কোটি ৪৯ লাখ ও বিটিবির কাছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খেলাপি পাওনা রয়েছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, গত অর্থবছর সবচেয়ে বেশি লোকসানে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। লোকসানের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির লোকসান বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ৮৮২ কোটি টাকার লোকসান করেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) লোকসান হয়েছে ৫৫২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের লোকসান ৩০৮ কোটি টাকা। বিআরটিসির লোকসান হয়েছে ১০১ কোটি টাকা।
বিএফডিসির লোকসান হয়েছে ২২ কোটি টাকা। বিআইডব্লিউটিএ লোকসান ৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের (বিটিএমসি) লোকসান ১৭ কোটি টাকা। বিআইডব্লিউটিসির লোকসান হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সাড়ে ৮ কোটি টাকার লোকসান করেছে।