বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় ওইসিডি
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা ইসিকে জানালেন ১৪ রাষ্ট্রদূত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪২ পিএম, ৩ জুলাই,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:১৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যাশার কথা ইসির কাছে তুলে ধরেছেন দেশের উন্নয়ন সহযোগী ১৪ দেশের কুটনীতিক।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয় ইউনিয়নের হাইকমিশনের নেতৃত্বে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা এসব কথা বলেন। এর আগে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালসহ ইসি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথাল চুয়ারড।
তিনি বলেন, নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে, দেশের গণতন্ত্র আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতে সহায়ক অবস্থা তৈরি করতে এবং সকল অংশীজনের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমাদের দেশগুলো নির্বাচন কমিশনকে যেকোনো প্রকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও শাণিত করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করতে চায় ওইসিডি সদস্য দেশগুলো।
সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, ওনারা এসেছেন, এটা একটা ট্রাডিশন। আগেও এসেছেন তারই ধাবাবাহিকতা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন-কানুন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা আমাদের কার্যক্রমগুলো জানিয়েছি। ওনারা সাধারণত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়ে থাকেন। সেজন্যই ওনারা ইলেকশনটা যদি ইনক্লুসিভ, একসেপ্টবল, ফ্রি এবং ফেয়ার হয়, তাহলে ওনারাও খুশি হবেন, পুরো দেশবাসী খুশি হবেন এই আশাবাদ ওনারা ব্যক্ত করেছেন। আমরা আমাদের দিক থেকে ইলেকশন কমিশন হিসেবে আমাদের যা যা করণীয় আমরা করবো। ওনারা প্লিজড। বলেছি ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজন হয়, আসবেন।
রবিবার বেলা তিনটায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আহসান হাবিব, রাশিদা সুলতানা ও মো. আলমগীর। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) ব্যানারে প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দেন। বিশ্বের ৩৮টি দেশ এই সংস্থার সদস্য হলেও আজ ১৫টি দেশের প্রতিনিধিদের আসার কথা ছিল। তবে অষ্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর আসেননি। যার ফলে বৈঠকে ১৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন। যেসব রাষ্ট্রদূত আজ বৈঠকে ছিলেন তারা হলেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস, কানাডার হাইকমিশনার লিলিও নিকোলস, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ফ্রান্সের সহকারী রাষ্ট্রদূত গুইলাম অড্রেন ডি কেরড্রেল, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আছিম ট্রস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকোনুনজিয়াটা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এনি গিয়ার্ড ভ্যান লিউয়েন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো ডি আসিস বেনিটেজ সালাস, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তোরান ও জাপানের হেড অব মিশন ইয়ামায়া হিরোয়ুকি।
বৈঠকে কোনো সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিনিধিরা কিছু বলেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন- ওরা যেটা বলেছে সহযোগিতা করার কথা। আমরা চট করেই নিজেরা কিছু বলিনি। আমরা বলেছি আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখবো। কোনো টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা উনাদের জানাবো। কী ধরনের সযোগিতা করবে, এই প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন- আমরা বলেছি সেটা আমরা বিবেচনা করে দেখবো। আমরা এখনো সহযোগিতা চাইনি। সক্ষমতা বাড়ানোর সহযোগিতা নাকি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ইলেকশন রিলেটেড। যেটা হতে পারে ভোটার এজুকেশন, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয় হতে পারে। আমি তো বলেছি আমরা উনাদের জানাইনি এখনো। আমরা যদি মনে করি কোনো রকম সহযোগিতা বা টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স বা ট্রেনিং প্রয়োজন হবে, তখন উনাদের জানাবো। এজন্য নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কী ধরনের সহযোগিতা উনারা দেবেন বা আমরা কী ধরনের সহযোগিতা চাইবো। উনারা পর্যবেক্ষকের কথা বলেছেন-আমরা বলেছি আমাদের দিক থেকে কোনো বাধা নেই। তবে এ বিষয়ে ডিপ্লোমেটিকলি আলোচনা করে দেখতে পারেন। ফরেন অবজারভারদের বিষয়ে আপনারা ফরেন মিনিস্ট্রিতে একটু কথা বলে দেখতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্বের বিষয়ে কোনো কথা বলেছেন কি-না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উনারা তেমন কিছু বলেনি। উনারাও খুব ভালো করেই জানেন এখনো কিছু কিছু দল ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। উনারাও বিশ্বাস করেন, আমরাও চেষ্টা করে যাব, যেন ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর আগে চলতি বছরের ৮ জুন ও ২৬ জুন যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত সিইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।