ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় উল্লম্ফন : শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭:৩৩ পিএম, ৩ জুলাই,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৫ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ব্যবসায়ীদের দাবির কারণে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা, রফতানি বাণিজ্যে মন্দা ও মহামারি করোনার আঘাতে ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফায় ধস নেমেছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের ব্যাংক খাত। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বেশিরভাগ ব্যাংকেরই বেড়েছে পরিচালন মুনাফা। এবার শুধু সুদ খাতের আয় নয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের কমিশনসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে প্রাপ্ত ফি বাবদ আয়ই ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার বড় উল্লম্ফনের বেশি ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি কস্ট অব ফান্ড বা আমানতের সুদহার কমিয়ে আনার প্রভাবও দেখা গেছে। যে ব্যাংক আমানতের সুদ যত বেশি কমিয়েছে, সেই ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় তত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার বড় প্রবৃদ্ধিকে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রান্তিক (তিন মাস) ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দেয়। এর আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে হয়। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সেই তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জে জমার দেয়ার আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য জানাতে পারবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার ব্যাংক হলিডে। ওইদিন ব্যাংকগুলো তাদের বিভিন্ন শাখা থেকে পাঠানো হিসাব একত্রিত করে ষাণ্মাসিকে (জানুয়ারি-জুন) আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫৩৩ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৭২ কোটি টাকা। এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ ৩৯৫ কোটি, যা আগের বছরে ছিল ৩৫৮ কোটি। আলোচ্য সময়ে ঢাকা ব্যাংক ৩৭৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। আগের বছরে যা ছিল ৩০৯ কোটি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১৬৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ কোটি টাকা বেশি। এই সময়ে এনসিসি ব্যাংকের আয় ছিল ৩৭৭ কোটি, আগের বছর যা ছিল ২৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক ২০২২ সালের প্রথম ষান্মাসিকে (জানুয়ারি-জুন) ১০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, এর আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকের মুনাফা ছিল ৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ২০ কোটি টাকা বা ২৫ শতাংশ। এ সময় এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৭৫ কোটি, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৫০ কোটি। আর ১২৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে মধুমতি ব্যাংক, আগের বছরে যা ছিল ৮৩ কোটি। বরাবরের মতো ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকটি ২০২১ সালে ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করে। ২০২০ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে হাজার কোটি টাকার বেশি পরিচালন মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর তালিকায় ছিল পূবালী, দ্য সিটি, ইস্টার্ন, সাউথইস্ট, ব্যাংক এশিয়া ও ব্র্যাক ব্যাংকের নাম। তবে দেশের বড় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। ২০২১ সালে মাত্র ২৪৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা দেখাতে পেরেছে ব্যাংকটি। যদিও ২০২০ সালে ৯২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জনের দাবি করেছিল ন্যাশনাল ব্যাংক। পরিচ্ছন্ন হিসাবের কারণে এবার ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা কমেছে বলে ব্যাংকটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। তবে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ ও করপোরেট কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হবে। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। তবে কয়েকটি ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেয়ায় ঘাটতির হিসাব কম লক্ষ্য করা গেছে। আর উদ্বৃত্ত সঞ্চিতি রক্ষার ফলে মোট সঞ্চিতির ঘাটতি কমে ১৪ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৪ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।