বেসামাল চালের বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৮ পিএম, ১০ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৫০ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বোরো ধানের ভরা মৌসুম চললেও চালের বাজারে জ্বলছে আগুন। খুচরা বাজারে গেল মে মাসের শেষ দিক থেকে চালের বাড়তি দামে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের দৈন্যদশা নতুন মাসের দশ দিনে পৌঁছেছে তুঙ্গে। খুচরা বিক্রির দোকানে বিআর-২৮ চালের কেজি হয়েছে ৫৪-৫৫ টাকা। পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়, ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বিআর-২৯। আর মোটা আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। অন্যদিকে ভালো মানের চিকন মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকা কেজিতে। নাজিরশাইল ৭৮-৮০ টাকা, চিকন আতপ চাল ৬৮ টাকা ও পোলাও চাল ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট ও আশপাশের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে কেন পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে তার সঠিক কোনো জবাব জানা নেই তাদের।
নিউমার্কেটের সাথী এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী আরিফ হাওলাদার বলেন, গত মাসের শেষ দিক থেকেই চালের দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। আমরা কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান থেকে কিনে এনে খোলা বাজারে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। বস্তাপ্রতি আমাদের বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। যার কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে মনে হচ্ছে না আগের দামে ফিরবে।
ক্রেতারা বলছেন, চালের দাম নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন তারা। বড় বাজারের খুচরা দোকানে যে দামে চাল বিক্রি হচ্ছে, এলাকার দোকানগুলোতে তার চেয়েও ১-২ টাকা বাড়তি চাইছেন বিক্রেতারা। ফরিদ হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পরও এই কয়েকমাস চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু গত মাস থেকে চালের দাম বেড়েছে। এর জন্য বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সত্যি বলতে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। শিগগিরই চালের দাম কিছুটা না কমলে জীবনযাপন আরও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
স্বস্তি নেই মাছ-মাংসের বাজারেও। সরেজমিনে নিউমার্কেটের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি রুই ৩০০-৩২০ টাকা, বড় কাতল ৪৫০ টাকা, ছোট কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ টাকা, বড় কৈ ৬০০ টাকা, বেলে ৪৫০ টাকা ও শিং মাছ ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে বড় রুপচাঁদা ১২০০ টাকায়, ছোট রুপচাঁদা ১১০০ টাকায়, বড় পোয়া ৫৫০ টাকায়, লাল কোরাল ৬০০-৭০০ টাকায়, বাটা ২৫০ টাকায় ও বাতাসি মাছ ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ছোট মাছের মধ্যে চিংড়ি ৩৫০ টাকা, পাবদা আকারভেদে ৪০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৭০০-৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লারের মুরগি অন্যদিনে ১৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও শুক্রবার ছুটির দিনে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন ১৮০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, কক মুরগি ৩২০ টাকা, প্যারেন্ট স্টক ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেটের কাঁচাবাজারের রূপসা চিকেন হাউজের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ব্রয়লারের দাম আগের মতোই আছে। ১৭৫-১৮০ এটা স্বাভাবিক দাম। লেয়ার, কক, প্যারেন্ট স্টক— এগুলোর দাম উঠানামা করে।
গরুর মাংস হাড়সহ ৭০০ টাকা, হাড়ছাড়া ৮৫০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা, ছাগলের মাংস ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লাল ও সাদ ডিম ৪০ টাকা হালি, হাঁসের ডিম ৬০ টাকা হালি, কক মুরগির ডিম ৪৫ টাকা হালি, কোয়েল পাখির ডিম ১২ টাকা হালি, দেশি মুরগির ডিম ৬০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেশির ভাগ সবজির দাম গত সপ্তাহের মতো থাকলেও দাম কিছুটা কমেছে রসুনের। নিউমার্কেটের সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক মুজিবুর রহমান জানান, গত সপ্তাহে ১২০ টাকা দরে রসুন বিক্রি হলেও এ সপ্তাহের বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, আলু কেজিপ্রতি ২৫ টাকায়, দেশি আদা ১০০ টাকায় এবং চায়না আদা ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মুগডাল ১২৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, এংকর ডাল ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা, মসুর ডাল ১৩৮ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মসলার মধ্যে আগের তুলনায় বেড়েছে জিরার দাম। ১০ টাকা দাম বেড়ে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। বড় এলাচ ২৪২০ টাকা, ছোট এলাচ ১৬২০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১১২০ টাকা, কালো মরিচ ৭১০ টাকা, সাদা মরিচ ৮৬০ টাকা, কালোজিরা ১২০ টাকা, সরিষা ১১০ টাকা, আলুবোখারা ৪২০ টাকা, কিসমিস ৩৮০ টাকা, মেথি ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।