চায়ের দোকানগুলোতে কেক পাউরুটি খাওয়া কমেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৩ পিএম, ৮ জুন,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:০৯ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
চায়ের দোকানগুলোতে কেক পাউরুটি খাওয়া কমেছে। কয়েকদিন আগেও যেই বন রুটি, পাউরুটি, কেকের দাম ১০ টাকা ছিল, তার দাম এখন হয়েছে ১৫ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে চায়ের দোকানগুলোতে বিক্রি হওয়া হাতে তৈরি বেকারি পণ্য যেমন- পাউরুটি, বিস্কুট, কেকজাতীয় খাদ্যের দাম বেড়েছে। রিকশাওয়ালা, নির্মাণ শ্রমিকসহ স্বল্প আয়ের মানুষেরাই এসব পণ্যের মূল ক্রেতা। কয়েকদিন আগেও যেই বন রুটি, পাউরুটি, কেকের দাম ১০ টাকা ছিল, তার দাম এখন হয়েছে ১৫ টাকা। ৫/৭ টাকারটা হয়েছে ১০ টাকা। হঠাৎ করে এসবের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি আগের চেয়ে কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর উদ্দেশে মে মাসের শেষে এসে দেশব্যাপী ধর্মঘটেও যান বেকারি মালিকরা।
বেকারি মালিকরা বলছেন, গত দুই মাস ধরে বেকারি পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হওয়া ময়দা, চিনি, ডালডা, তেলের দাম বেড়েছে। ফলে এসব বেকারি পণ্যের দাম না বাড়িয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে তারা এসব পাউরুটি, বন রুটি, কেক, বিস্কুটের দাম বাড়িয়েছেন। রাজধানীর বাসাবো এলাকায় একটি চায়ের দোকান চালান লিয়াকত আলী। তার দোকানে চায়ের পাশাপাশি কেক, পাউরুটি, বনরুটি, বিস্কুটও পাওয়া যায়। এসব বেকারি পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে লিয়াকত আলী বলেন, নতুন মাস শুরু হওয়ার কিছু দিন আগ থেকে তারা (বেকারি মালিকরা) মাল দেয়া বন্ধ রেখেছিল, লক্ষ্য ছিল দাম বাড়ানো। এরপর তারা কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আর যেগুলোর দাম বাড়েনি সেগুলোর সাইজ ছোট করা হয়েছে।
তিনি আরও বলনে, আমার দোকানের কাস্টমার মূলত রিকশাচালক, শ্রমিক, পথচারী, শ্রমজীবী মানুষ। যেই রিকশাচালক সারাদিন রিকশা চালিয়ে দিনে কয়েকবার পাউরুটি, কেক, বনরুটিসহ চা খেত, তারা এখন খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আগে সারাদিনে ৫/৬ বার এলেও এখন আসে ২/৩ বার। কারণ দাম বেশি, অতবার খেলে টাকা বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে, তাই তারা কম আসছে। একবার নাস্তা করতেই ১৫ টাকার জায়গায় লেগে যাচ্ছে ২২ টাকা। তাহলে কয়েকবার নাস্তা করলে কি আর পোষায়? তাই নাস্তা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। ফকিরাপুল এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক আব্দুর রশিদ মিয়ার সঙ্গে। কেক পাউরুটি, বনরুটির দামের বিষয়ে তিনি বলেন, রিকশা চালকরা সাধারণত নির্দিষ্ট এলাকাকেন্দ্রিক রিকশা চালায়। তাই একজন রিকশাচালক একটি নির্দিষ্ট এলাকার দোকান থেকেই সাধারণত এসব কিনে খান।
তিনি বলেন, আমাদের নাস্তা বলতে রুটি, কলা, বিস্কুট, বনরুটি, তেল বন, চা। রিকশা চালাতে গেলে ক্ষুধা লাগে, তাই একজন রিকশাচালক সারাদিনে ৫/৬ বার করে ওসব চায়ের দোকানে গিয়ে চা, রুটি, কেক, পানি খায়। আমি নিজেও দিনে ৫/৬ বার এসব দিয়ে নাস্তা খেতাম। আগে একটা পাউরুটি, কেক বা বনরুটি খেতে খরচ হতো ১০ টাকা, আর চা ৫/৬ টাকা। কিন্তু এখন তা বেড়ে ১০ টাকারটার দাম হয়েছে ১৫ টাকা। চা হয়েছে কোথাও ৬ টাকা আবার কোথাও ৭ টাকা।
তিনি আরও বলেন, তাহলে একবার নাস্তা করতেই ১৫ টাকার জায়গায় লেগে যাচ্ছে ২২ টাকা। তাহলে কয়েকবার নাস্তা করলে কি আর পোষায়? তাই নিজেও নাস্তা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। ১৫ টাকা দিয়ে বন রুটি, কেক খাওয়ার চেয়ে ১০/১২ টাকা দিয়ে দুইটা সিঙ্গারা, সামুচা খাই এখন। হঠাৎ করে এক লাফে এতটা দাম বেড়ে যাওয়া ঠিক হয়নি আমাদের জন্য।
রাজধানীর গ্রীন রোড এলাকার চা-বিস্কুট-কেকের দোকানি ফয়েজ উদ্দিনও বলেন, বেকারি পণ্যের দাম বাড়ার এসবের বিক্রি অনেক কমে গেছে। মূলত রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষরা এসব নাস্তা হিসেবে বেশি খান। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা এত দামে আর খাচ্ছে না। ফলে বিক্রি কমে গেছে। আগে যেখানে দিনে ৪০ থেকে ৫০টা বন রুটি, কেক রাখতাম দোকানে, সেখানে এখন ৩০টা নিলেও বিক্রি হচ্ছে না। আগে যেসব কাস্টমার আসতো, এগুলো খেত, দাম বাড়ার কারণে তারা আর সেভাবে খাচ্ছে না। এছাড়া বিস্কুট, ছোট বন, ড্রাইকেক যেগুলোর দাম বাড়েনি সেগুলোর সাইজ ছোট করেছে বেকারিওয়ালারা, ফলে ওইগুলোও বিক্রি কমেছে। তাই এখন দোকানে নতুন করে সিঙারা রাখতে শুরু করেছি। আমাদের করার কিছু নেই, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা যদি দাম না বাড়াই তাহলে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছে। আজাহার মোল্লা রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে বেকারি পণ্য পৌঁছে দেন ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলোতে। তিনি বলেন, ময়দা, পাম অয়েল, চিনি, ডিম, ডালডাসহ সব উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মালিকরা পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আমাদের কেনা পড়ছে বেশি সে কারণে বিক্রি করতেও হচ্ছে বেশি দামে। একটা ১৫ টাকা দামের রুটি, কেকের ক্ষেত্রে দোকনদারদের ৩ টাকা লাভ দেয়া হচ্ছে। তবে এটা সত্যি মালের দাম বাড়ার পর দোকানিরা কম পণ্য রাখছে, কারণ তাদের বিক্রি না কি কম হচ্ছে। বেশিরভাগ দোকান থেকে পরেরদিন সকালে কিছু ফিরতি মাল আসছে। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার আকলিমা বেকারির মালিক জাহিদ হাসান বিপ্লব। তিনি বেকারি সমিতির একজন সদস্যও। হঠাৎ বেকারির সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে আমাদের করার কিছু নেই, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। রমজান মাসের আগেও ময়দার বস্তা ছিল ১৫০০ টাকা, সেটা বেড়ে ২২০০, সেখান থেকে ২৮০০, পরে ৩২০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। চিনির বস্তা ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা, ডালডার কার্টন ২৬০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকা হয়েছে, সেই সঙ্গে মোড়ক পলিথিনের দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে আমরা যদি পণ্যের দাম না বাড়াই তাহলে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছে। বাংলাদেশে গম চাহিদার বড় একটা অংশ আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে। তবে যুদ্ধের কারণে দেশ দুটি থেকে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গমের দাম বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশ আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। সেই সাথে আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি খাদ্যর দাম বেড়েছে বেশ খানিকটা। একইসঙ্গে ভোজ্যতেলের দামও এখন লাগামছাড়া বাংলাদেশসহ বহু দেশে।