দুই শতাধিক বিলাসবহুল পণ্যে শুল্ক আরোপ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৬ পিএম, ২৪ মে,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আমদানি প্রবণতা কমাতে ও দেশীয় পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিদেশি ফুল ও ফল, ফার্নিচার এবং কসমেটিকস আইটেমের দুই শতাধিক পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ বা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এমন নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বিদেশি ফল, বিদেশি ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সোমবার (২৩ মে) এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এনবিআর পরিচালক (জনসংযোগ) সৈয়দ এ মু’মেন বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাসকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশি ফল, বিদেশি ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ০ ও ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যা ২৩ মে থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফুল ও ফল চাষে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। এ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবে এবং ফুল ও ফল চাষে উৎসাহিত হবে। এতে দেশের প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকস যথেষ্ট মানসম্পন্ন এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ফার্নিচার ও কসমেটিকসে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে। এছাড়া এ ধরনের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ বা বৃদ্ধি করা পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— তাজা ও শুকনো যেকোনো ধরনের আমদানি করা ফুল, অলংকার তৈরিতে আমদানি করা ফুল, বিভিন্ন ধরনের আর্টিফিশিয়াল ফুল এবং গাছের চারা কিংবা গাছের শাখা-প্রশাখা। ফলের মধ্যে রয়েছে— তাজা বা প্রক্রিয়াজাত আম, কলা, আঙ্গুর, ডুমুর, আনারস, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, ম্যাঙ্গোস্টিন বা গাব জাতীয় ফল, লেবু, তরমুজ, বরই, এপ্রিকট, চেরি জাতীয় ফল, হিমায়িত কিংবা প্রক্রিয়াজাত করা ফল বা ফলের বীজ ও মিক্সড ফলের খাবার। ফার্নিচারের জন্য আমদানি করা বাঁশ, পার্টস, বেতের ফার্নিচার এবং ফার্নিচারের জন্য আমদানি করা বিভিন্ন উপাদান। এছাড়া অফিস, রান্নাঘর, বেডরুমে ব্যবহৃত কাঠের ফার্নিচার, প্লাস্টিকের ফার্নিচার ও বিভিন্ন মেটাল ফার্নিচার। কসমেটিকসের মধ্যে পারফিউম, বিউটি ও মেকআপ প্রিপারেশন, দাঁতের ফ্লস, দাঁতের পাউডার, প্রিশেভ ও আফটার শেভ কসমেটিকস, চুলের জন্য প্রসাধনী ইত্যাদি।
বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে তিন হাজার ৪০৮টি পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা আরডি প্রযোজ্য রয়েছে। এসব পণ্যে সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত আরডি প্রযোজ্য রয়েছে। এর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল আইটেম হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ আইটেমগুলোর ওপর উচ্চ শুল্ক রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার উচ্চ ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অনুসরণ করে নতুন করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলমান বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি সামাল দিতে ও সংকট উত্তরণে সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।