বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ডলারের দামে অস্থিরতা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:৪৬ পিএম, ২০ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ডলারের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে পেশাগত আচরণ করেনি।
উলটো তারা সংকটকে কাজে লাগিয়ে একদিকে বাড়তি মুনাফার চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে হুহু করে বাড়িয়েছে ডলারের দাম। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিয়ম-কানুনের কোনো তোয়াক্কাই করেনি। কম দামে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি করেছে।
আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি না করে করপোরেট লেনদেনের নামে চড়া দামে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে বৃহস্পতিবার রিজার্ভ আবার বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম আগের মতোই ছিল। তবে কিছু ব্যাংকে নগদ ডলারের দাম সামান্য বেড়েছে। আমদানিতে ডলারের জোগান ক্ষেত্রে আগের দামই রয়েছে। তবে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দাম প্রায় ৮ টাকা কমেছে। গত বুধবার কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা পর্যন্ত ওঠে। বৃহস্পতিবার তা কমে ৯৬ টাকায় নেমে আসে।
কার্ব মার্কেটে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রবাসীরা যেসব ডলার বিদেশ থেকে নগদ নিয়ে আসেন সেগুলোকে ব্যাংকমুখী করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের জোগান ও চাহিদা দুটোই কমেছে। কার্ব মার্কেট থেকে বেআইনিভাবে যারা ডলার কিনে মজুত করেছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজখরব নেওয়া হচ্ছে।
আন্তঃব্যাংকে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা দরে বেচাকেনা হয়েছে। আমদানির জন্য ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৮৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে নগদ ডলারের চাহিদা বেশি। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে ৯১ থেকে ৯৭ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, করোনার পর হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় গত আগস্ট থেকেই পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। গত আগস্টে এক মাসেই আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৬৩ শতাংশ। জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। একই সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার সময়ে স্থগিত এলসি ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ।
এ কারণে ডলারের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে। বাজারে চাহিদা থাকায় চলতি বছরের সাড়ে চার মাসে ডলারের দাম চার দফায় ১ টাকা ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে আরও বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব ব্যাংক ডলার কিনবে তারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনেই ব্যবহার করবে। অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু এবার অন্য ব্যাংকের কাছে চড়া দামে বিক্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার থেকে ডলার কিনে তা চড়া দামে করপোরেট লেনদেনের নামে আগাম বিক্রি করার ঘটনাও ঘটেছে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক যে দামে ডলার কিনবে তার চেয়ে ৫ পয়সা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে।
কিন্তু ব্যাংকগুলো এ নিয়ম মানছে না। তারা ডলার কিনে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৫ টাকা বেশি দামেও বিক্রি করেছে। প্রবাসী ও রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো ডলার কিনছে ৮৭ থেকে ৮৯ টাকায়। কিন্তু আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৯৬ টাকায়।
নিয়ম অনুযায়ী এলসি খোলার আগে ব্যাংককে ডলারের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ যে সময়ে এলসির দেনা শোধ করতে হবে, ওই সময়ে ব্যাংকে ডলার আসবে এমন নিশ্চয়তা নিয়েই এলসি খুলতে হবে। কিন্তু বেশ কয়েকটি ব্যাংক তা না করেই এলসি খুলেছে। ফলে দেনা পরিশোধের সময়ে তারা আর বাজারে ডলার পাচ্ছে না। সব খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার দিচ্ছে না।
ফলে ব্যাংকগুলো সংকটে পড়ে। এতেই বেড়ে যায় ডলারের দাম। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে। ওইসব ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। তবে আপাতত কোনো কঠোর অবস্থানে যাবে না। এতে বাজারে ভুল সংকেত যাবে। যেসব ব্যাংকের দুর্বলতা রয়েছে ও অনিয়ম করেছে তার ধরন অনুযায়ী তাদের সতর্ক করা হবে।
এছাড়া বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে ব্যাংকগুলোর ওপর খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ডলারের দাম বেঁধে দেয় না। ব্যাংকগুলোই নিজেদের চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে। কিন্তু কয়েকটি ব্যাংকের ডলারের সংকট থাকায় তারা দাম বাড়িয়েছে। বড় ব্যাংকগুলো এখনো আমদানির জন্য ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা দরেই ডলার বিক্রি করছে।
সূত্র জানায়, রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলারের জোগান বাড়ানো হবে। ফলে সংকট কমবে। রেমিট্যান্স সংগ্রহ বাড়াতে প্রবাসীদের মুদ্রা বিনিময় হারের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে। বর্তমানে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার দর ও বিক্রির দরের মধ্য ব্যবধান অনেক। এ ব্যবধান কমিয়ে রেমিট্যান্স কেনার দর বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।