৪ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ, মই দিয়ে সেতু পারাপার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২১ পিএম, ১৬ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৩৬ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বাগেরহাটের রামপালে বগুড়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও। ফলে ১০ গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষ মই দিয়ে পার হচ্ছে সেতুটি। রামপালের হুড়কা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বগুড়া নদীর ওপরে এলজিইডির অর্থায়নে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় চার বছরেও এর নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। তাই দ্রুত কাজ শেষ করে হুড়কা ইউনিয়ন থেকে রামপাল সদরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম সেতুটিকে খুলে দেয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
এদিকে রামপাল উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন, করোনা মহামারি ও সেতুর সংযোগ সড়কের জায়গা নিয়ে স্থানীয় দুই ব্যক্তির মামলার কারণে দুই দফায় নির্মাণ কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে শিগগিরই এর কাজ শেষ হয়ে যাবে। জানা গেছে, এলজিইডির অর্থায়নে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইটি এন্ড জেই। ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার ১৩৩ টাকা। ইতিমধ্যে সেতুর ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্তের কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে সেতুটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে রামপাল উপজেলা এলজিইডি অফিস।
সরেজমিনে দেখা যায়, হুড়কা ইউনিয়নের বেলাই, ভেকটমারী, গাজিখালী, কাঠামারী, নলবুনিয়া, গজগজিয়া, হুড়কা, চাড়াখালী-১, চাড়াখালী-২ ও ছিদামখালী গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই ব্রিজটি। ব্রিজটির এক পাশের সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। কাজ চলছে বিপরীত পাশের সংযোগ সড়কে। যে পাশের সংযোগ সড়কের কাজ চলছে সেই পাশে বাঁশের মই দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে স্থানীয়রা। হুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার বলেন, মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। একাংশের সংযোগ সড়কের কিছু অংশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা খিরোজ দাস ও প্রতাপ রায় নামে দুই ব্যক্তি মামলা করেন। ওই মামলার কারণে সেতুর সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে স্থানীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ খিরোজ দাসকে দুই লাখ ও প্রতাপ রায়কে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। স্থানীয় অমল দাস বলেন, কয়েক বছর ধরে এই সেতুর কাজ হচ্ছে, কাজ কবে যে শেষ হবে তার তো ঠিক ঠিকানা নেই। রামপাল সদর, মোংলা ও বাগেরহাট যাওয়ার জন্য এই নদী পার হয়েই যেতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে মই দিয়ে যাই। সুজন মজুমদার নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, হুড়কা ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তারা কৃষিকাজ, মৎস্য ও মোংলা ইপিজেডে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বগুড়া নদী পার হয়ে শহরে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া যাতায়াতের বিকল্প যে পথটি রয়েছে, সেটি প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তাই হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম এই সেতুটি দ্রুত মানুষের চলাচলের উন্মুক্ত করার দাবি জানাই।
রামপাল উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলজার হোসেন বলেন, করোনা মাহামারি ও সীমানা জটিলতায় করা মামলার কারণে বগুড়া খেয়াঘাট সেতুর কাজ দুই দফা পেছানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সেতুর ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী জুন মাসে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, পল্লী বিদ্যুতের লাইন সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের জন্য ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ কাজ শুরু করেছে। এছাড়া সীমানা জটিলতায় যারা মামলা করেছিল, তাদের জমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।