বিশ্ববাজারে পাম-সয়াবিন তেলের দামে রেকর্ড
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:১৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৯ এএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
মাত্র পাঁচ কর্মদিবসে বৈশ্বিক পণ্যবাজারে একের পর এক রেকর্ড গড়েছে পাম ও সয়াবিনের দাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির যে রেকর্ড হয়েছিল, সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় সেই রেকর্ডও ভেঙে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। তার আগে পাঁচ কর্মদিবসের ব্যবধানে টনপ্রতি সয়াবিনের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩৯ মার্কিন ডলার বা লিটারপ্রতি ১১ টাকা ৪৩ পয়সা। মূল্যবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭৩। একইভাবে টনপ্রতি পাম তেলের দাম বেড়েছে ১০০ ডলার বা লিটারপ্রতি ৮ টাকা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ধারাবাহিকভাবে দাম বেড়ে গত ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য লেনদেনের বাজার তথা কমোডিটি মার্কেট শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) সয়াবিন তেলের দর উঠেছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮১২ ডলার। যুদ্ধের তীব্রতা কমে আসায় ও চীনের লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কায় দাম সংশোধনও হয়েছিল। নেমে এসেছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৬২১ ডলারে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার আগের দিন সিবিওটিতে টনপ্রতি ১ হাজার ৭৯৭ ডলারে লেনদেন হয় সয়াবিন তেল।
সয়াবিন তেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ আর্জেন্টিনার রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি দামে। তবে গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো নিজ দেশের বাজার সহনীয় রাখতে পাম তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় নতুন রেকর্ড হয় পাম ও সয়াবিনের দামে।
গতকাল সিবিওটিতে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৩৫ ডলারে। লিটারে এই দর বেড়েছে ১৫৯ টাকা। পাশাপাশি বেড়েছে পাম তেলের দরও। এসব তেল বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত আমদানি করতে হলে পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হবে।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক আসির হক বলেন, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার দিনে বাংলাদেশে পাম তেল আমদানি করতে ব্যয় হতো টনপ্রতি ১ হাজার ৭৬০ ডলার। গতকাল বুধবারের দর অনুযায়ী ১০০ ডলার বেশি দরে, অর্থাৎ ১ হাজার ৮৬০ ডলার খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আনতে।
ইন্দোনেশিয়ার দৈনিক দ্য জাকার্তা পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি বন্ধের কারণে ইন্দোনেশিয়ার প্রতি মাসে ১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হাতছাড়া হবে।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৩ লাখ টন পাম তেল আমদানি হয়। এর ৯০ শতাংশ আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে। মালয়েশিয়ার চেয়ে তুলনামূলক কম দামের কারণেই ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশি পাম তেল আমদানি করা হয়। মালয়েশিয়া থেকে আমদানি হয় ১০ শতাংশ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় চাপ পড়েছিল সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর। এখন ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় সব ধরনের ভোজ্যতেলের ওপর প্রভাব পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে বিশ্বে পাম তেল রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮১ লাখ টন। এই রপ্তানির ৫৬ শতাংশ বা ২ কোটি ৬৮ লাখ টনই করেছে ইন্দোনেশিয়া। মালয়েশিয়া রপ্তানি করেছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টন, যা বৈশ্বিক রপ্তানির ৩৩ শতাংশ। বাকি ১১ শতাংশ রপ্তানি করেছে কয়েকটি দেশ মিলে।