অসময়ের বৃষ্টিতে কপাল পুড়ল রসুন চাষিদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৬ পিএম, ৮ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫৭ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
শরীয়তপুরে অসময়ের বৃষ্টিতে রসুনের ফলনে বিপর্যয় হয়েছে। আকারে ছোট হয়েছে রসুন। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হলেও বাজারে দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
জানা যায়, গত বছর এই সময়ে বাজারে বাছাই ছাড়া প্রতি কেজি রসুনের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এবার বাছাই করা রসুন চলছে ২০ থেকে ২৮ টাকা। এ যেন কৃষকের মাথায় হাত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর রসুনের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে শরীয়তপুর সদরে ১১০ হেক্টর, নড়িয়ায় ১০৪০, জাজিরায় ২১৪১, ভেদরগঞ্জে ১৫০, ডামুড্যায় ৪৫ ও গোসাইরহাট উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে।
কৃষকরা বলেন, ‘এবার মাঠে রসুন উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে কিছুটা বেগ পেতে হয়। এরপরও রসুন উৎপাদন করে ফলন দেখে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রসুন ওঠানোর পর মুখে হাসি ধরে রাখতে পারিনি। রসুনের যে আকার হওয়ার কথা ছিল, তার অর্ধেকও হয়নি। এতে বাজারে রসুনের দাম পাচ্ছি না। গতবারের তুলনায় এবার অর্ধেক দামও বাজারে নেই।’
জাজিরা সেনেরচর এলাকার কৃষক হাকিম দেওয়ান বলেন, ‘এ বছর রসুনের চারা লাগানোর পর বৃষ্টি হয়েছিল। এতে সব চারা পচে যায়। পরে সেগুলো উঠিয়ে আবার নতুন চারা লাগাই। কিন্তু সময় কম ও খরার কারণে রসুন আকারে ছোট হয়েছে। গত বছর ৩৩ শতাংশ জমিতে রসুন হয়েছিল ৬০ মণ, যা এবার ২০ থেকে ২৫ মণ পাচ্ছি। আবার বাজারে দাম নেই বললেই চলে। ২০ থেকে ২৫ টাকা চলছে রসুনের দাম। এমন হলে কীভাবে চাষ করব?’
আরেক কৃষক আশিক মোড়ল বলেন, ‘বৃষ্টিতে অনেক ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষেতে কীটনাশক দিলেও কোনো লাভ হয়নি। গাছের আগা চিকন হয়ে পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। এবার প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লস হবে। অনেকেই এবারের পর আর রসুন আবাদ করবে না বলে ভাবছে।’
সরেজমিনে মাঠে গেলে দেখা যায়, পুরুষরা রসুন ওঠাচ্ছেন। নারীরা তা কেটে দিচ্ছেন। কথা হয় হনুফা বিবির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার মাঠে গাছ হয়েছে ভালো। কিন্তু রসুনের আকার ছোট হয়েছে। আগে আমরা দিনে ৪ থেকে ৫ মণ রসুন কাটতে পারতাম। আর এখন ২ মণ রসুন কাটতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। ছোট হওয়ার কারণে কেটে আয় পাওয়া যায় না।’
শ্রমিক আলেয়া বিবি বলেন, ‘আমরা প্রতি মণ রসুন কাটি ৭০ টাকা করে। আগে আমাদের বেছে এক মণ রসুন কাটতে সময় লাগত দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। আর এখন দেড় মণ রসুন কাটতে সময় লাগে সারা দিন। কেউ কেউ আবার এক মণের বেশি কাটতেও পারে না। সারা দিন রোদে পুড়ে এই রসুন কেটে যা আয় করে, তা দিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সত্তার বলেন, ‘শরীয়তপুর পেঁয়াজ, রসুন আবাদীয় একটি জেলা। এ বছর রসুনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর, কিন্তু কৃষকরা আবাদ করেছেন ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। তবে ফলন যা ধরা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। ঘূর্ণিঝড় ও অসময়ের বৃষ্টির কারণে রসুনের আকার ছোট হয়েছে। এতে রসুন পূর্ণতা পায়নি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে চায়নিজ যে রসুন রয়েছে, সেটির দাম ঠিকই বেশি রয়েছে। কিন্তু দেশি রসুনের দাম নেই বললেই চলে। তবে আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’