দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে ক্ষোভের মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ৫ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৪ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সংসদে ক্ষোভের মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সংসদে এমপিরা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সাধারণ মানুষ অ্যাফেকটেড (ক্ষতিগ্রস্ত) হচ্ছে। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে না।
আজ মঙ্গলবার সংসদে বাণিজ্য সংগঠন বিল পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিলের ওপর আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সিন্ডিকেটের স্বার্থে বিলটি আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে সিন্ডিকেটকে উৎসাহী করা হচ্ছে। বিএনপির সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হইচই হলো। ১৫ দিনে সিন্ডিকেট এক হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেট হলো সরকার। সরকার আর সিন্ডিকেটের মধ্যে পার্থক্য নেই।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, সাধারণ মানুষ অ্যাফেকটেড হচ্ছে। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সিন্ডিকেট মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে না।
তিনি বলেন, বলা হয় যুদ্ধের কারণে দাম বেড়েছে। যেসব পণ্য আমদানি করা হয় সেগুলোর দাম বাড়তে পারে। যেগুলো যুদ্ধের আগে আমদানি করা হয়েছে এবং যেগুলো দেশি পণ্য সেগুলোর কেন দাম বাড়বে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবি জানান তিনি। জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সাধারণ মানুষ এখন পুষ্টিমানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে যে লেবু দুই টাকা সেটা ঢাকায় ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীকে আবার যুদ্ধ করতে হবে।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, গ্যাসের অভাবে ঢাকায় হাহাকার চলছে। গ্যাসের দাম, তেলের দাম সব বাড়ানো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। কিন্তু সেখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ক্ষমতার বলয়ে থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। তারেক রহমান লন্ডন থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছেন, বিএনপির কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে- এসব অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, আজ সংবাদপত্রে এসেছে তিনি (বাণিজ্যমন্ত্রী) গতকাল বাজারে গিয়েছেন এবং তিনি ২৮ টাকা কেজিতে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। এখন মাননীয় মন্ত্রী যদি ঘোষণা দিয়ে একটু কাঁচাবাজার, সবজি বাজারসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যেতেন মানুষও ওই বাজারে যেতে পারতো এবং মন্ত্রীর মতো কম দামে জিনিস কিনতে পারতো। কারণ উনি যতই ভ্যাট কমিয়ে মূল্য কমানোর চেষ্টা করছেন, প্রকৃতপক্ষে বাজারে পণ্যের দাম অত কমেনি।
তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী সজ্জন মানুষ। কিন্তু তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। যে কারণে প্রায় সময় সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। মন্ত্রী একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী কিন্তু কেন তিনি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
তিনি আরও বলনে, সত্য স্বীকার করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সিন্ডিকেট করে তেলের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় সফল ব্যবসায়ী। মন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটুকু সফল সেটা বলতে না পারলেও বাজারে গেলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সেটি ভালোভাবে জানা যাবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দাবি করে তারা ব্যবসাবান্ধব। যে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী একজন ব্যবসায়ী, সেই সরকার জনবান্ধব নয়, ব্যবসাবান্ধব হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। তার অনেক আগে এই সংসদ অধিবেশনে তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছিলেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে যুদ্ধকে সামনে নিয়ে আসলে হবে না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মূল্য বাড়িয়ে পকেট কেটে অনেক টাকা নিয়ে গেছে। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, অ্যাপোলো (এভারকেয়ার) হাসপাতালে গেলে লক্ষাধিক টাকা বিল এলে, বাজারে গেলে বেশি দাম দেখে বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা মনে পড়ে। জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, সরকার ধরলে দাম কমে আবার যখন সরকার শিথিলতা দেখায় তখন দাম বাড়ে। একটার দাম কমলে আরেকটার দাম বাড়ে এটা একটা লুকোচুরি খেলার মতো। বিরোধী এমপিদের বক্তব্যের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি বরাবরই লক্ষ্য করি একটা ব্যাপার কোনো কোনো সদস্য আমার মন্ত্রণালয়ের কোনো কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলেন যে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী সেহেতু সেই দিকটাকেই বেশি করে দেখানো হয়।
তিনি বলেন, ব্যবসা করি আজ ৪০ বছর, রাজনীতি করি ৫৬ বছর। ’৬৬ সাল থেকে শুরু করেছি কিন্তু রাজনীতিবিদ হতে পারিনি। এই ঢাকা শহরে অর্ধেকের সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম ’৭৩ সালে। ’৬৯ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, উকিল যখন পার্লামেন্ট মেম্বার হন, ডাক্তার যখন হয় তাকে কেউ বলে না যে উকিল কেন আসছে? কিন্তু আমি ব্যবসায়ী বলে আমার অপরাধ।
টিপু মুনশি বলেন, যুদ্ধের কারণে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, এটা তিনি কখনো বলেননি। প্রতি মাসে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। এখন বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার কোথাও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে না। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে। যে কেউ চাইলে তেল আমদানি করতে পারে। সরকার সিন্ডিকেট করে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, একটি টিসিবির ট্রাক থেকে আড়াইশ মানুষকে পণ্য দেয়া হয়। ছবি দেখানো হয় পণ্যের জন্য মানুষ দৌড়াচ্ছে। ৩০০ জন লাইনে দাঁড়ালে ৫০ জন পাবেন না। বাকি ২৫০ জন যে পণ্য পেয়েছেন সেটা দেখানো হয় না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট বলে যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা কেউ রাজনীতি করেন না, তারা কেউ এমপি নন। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত ফলোআপ করছেন।