‘সস্তায়’ সয়াবিন পেতে কিনতে হচ্ছে টিসিবি’র পচা পেঁয়াজও
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:২২ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাজার থেকে দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে দাম পড়ে ৩৩৬ টাকা। একই পরিমাণ তেল টিসিবি’র ট্রাক থেকে ২২০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। এতে সাশ্রয় হয় ১১৬ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এ সাশ্রয়ের আশায় টিসিবি’র ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ সারি। রোদে পুড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা।
তবে টিসিবি’র ট্রাক থেকে আলাদা করে শুধু দুই লিটার তেল কেনার সুযোগ নেই। প্যাকেজ আকারে নিতে হয় আরও তিনটি পণ্য। প্যাকেজে সয়াবিন তেলের সঙ্গে থাকে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি করে ডাল ও চিনি, যার দাম পড়ে ৬১০ টাকা। বাজার থেকে প্যাকেজে থাকা পণ্যগুলো কিনতে গেলে খরচ পড়ে প্রায় ৯০০ টাকা।
এ সাশ্রয়ের স্বস্তির সঙ্গে ক্রেতাদের হতাশাও কম না। তাদের অভিযোগ, টিসিবি’র ট্রাক থেকে কেনা পেঁয়াজ খাওয়া যায় না। পাঁচ কেজির মধ্যে অন্তত দুই কেজি থাকে পুরোপুরি পচা। বাকি তিন কেজির ওপরের অংশ ফেলে দিয়ে কোনোমতে রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। ফলে তুলনামূলক সস্তায় সয়াবিন তেল কিনতে এসে বাধ্য হয়ে টিসিবি’র পচা পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে তাদের।
বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ। ফলে বাধ্য হয়ে টিসিবি’র ট্রাকের পেছনে ছুটছেন তারা। তবে অন্য সব পণ্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চাহিদা সয়াবিন তেলের। বাজারে সয়াবিন তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় টিসিবি’র সয়াবিন কেনার আশায় ট্রাকের পেছনে ভিড় করছেন মানুষ।
কম দামে পণ্য কিনে স্বস্তি নিয়ে ফিরছেন অনেকে। তবে বরাদ্দ সীমিত থাকায় অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় কিছুক্ষণ পরই মিরপুর ২নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন রাস্তায় এসে দাঁড়ায় টিসিবি’র ট্রাক। মুহূর্তেই সেখানে শতাধিক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে যান। শুরু হয় ঠেলাঠেলি ও হই-হুল্লোড়।
কবির নামে একজন সেখানে কালো মার্কার দিয়ে লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের হাতে সিরিয়াল নম্বর লিখে দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাক এসেছে আধা ঘন্টাও হয়নি। এর মধ্যে একশোর বেশি মানুষ হাজির। সর্বশেষ নম্বর লিখলাম ১৩৫। এখনো পণ্য বিক্রি শুরু হয়নি। সব রেডি (প্রস্তুত) করে বিক্রি শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে জনপ্রতি পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হয়। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা। এছাড়া মসুর ডাল ৬৫ ও চিনি ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে প্যাকেজের দাম পড়ছে ৬১০ টাকা।’ আবেদিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘এই একই প্যাকেজ বাজার থেকে কিনলে খরচ পড়ে প্রায় ৯০০ টাকার মতো। সেই হিসেবে কয়েক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩০০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে পাঁচ কেজি পেঁয়াজের মধ্যে দুই কেজি নষ্টই থাকছে। ফলে ৬০ টাকা সেখানে লোকসান হচ্ছে।’
দুই শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কালাপানি থেকে এসেছেন গৃহকর্মী জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘এক মাস ধরে টিসিবি’র জিনিস কিনে সংসার চালাচ্ছি। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে। তার যে আয়, তাতে বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে সংসার চালানো দায়। চালের গাড়ি থেকে চাল কিনি। চাল অন্য জায়গা থেকেও কেনা যায়, কিন্তু তেলের দাম অনেক।’
টিসিবি’র ট্রাকের খোঁজ রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে জানিয়ে জেসমিন বলেন, ‘লাইনে দাঁড়িয়ে কাউরে আপা ডাকি, কাউরে খালা ডাকি। এভাবে সম্পর্ক করে নিতে হয়। পরে তাদের নম্বর নিয়ে রাখি। তাদের কাছ থেকে গাড়ির খবর পাই। আজকে যেমন- এক আপা মোবাইলে কল দিয়ে জানালেন, ট্রাক এসেছে। তখন তাড়াতাড়ি করে বাচ্চা দুটোরে নিয়ে চলে আসলাম।’
মনসুরা নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘তেলের দামটা বাজারে একটু কমলে সবার জন্য ভালো হতো। এখানে পণ্য কিনতে রোদে পুড়ে সিরিয়াল দিতে হয়। অনেক সময় মারামারি লেগে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কা খেতে হয়।’
শাবাবউদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘টিসিবির পণ্য কিনে অনেকে দোকানে বিক্রি করে দেয়। এটা খুব অন্যায়। ট্রাক যখন আসে, তখন বলা হয় ২০০ জনকে পণ্য দেবে। অথচ লাইনে থাকেন ৫০০-৬০০ মানুষ। লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কেনা যায় না। টিসিবি’র পণ্য কিনতে ভোগান্তির শেষ নেই।’